More

    মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান: বিক্ষোভে নিহত নারীর প্রতি শ্রদ্ধায় হাজারো মানুষ

    অবশ্যই পরুন

    গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিডোতে এক বিক্ষোভে মিয়া থয়ে থয়ে খাইং নামে এক তরুণী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে মারা যান।
    মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত তরুণীর শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। রোববার রাজধানী নেপিডোতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

    মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইং মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আর কিছুদিন পরই তার বিশতম জন্মদিন ছিল।

    ওই বিক্ষোভে অন্তত তিন জন নিহত হন।

    রোববার হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নিহত ওই তরুণীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

    অনেকেই তিন আঙ্গুলের সালাম ঠুকে সম্মান জানান, বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলনে এই প্রতীক ব্যবহার করে আসছে।

    চলতি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

    প্রথমদিকে আগাম নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিক্ষোভকারীরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

    বিক্ষোভকারীদের দাবি, দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি এবং তার জাতীয় লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের অন্যান্য সদস্যদের যেন মুক্তি দেয়া হয়।

    সামরিক বাহিনী অভিযোগ করেছে যে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার কারণে মিস সু চি’র দল এনএলডির ভূমিধস জয় পেয়েছে। যদিও নির্বাচনে কারচুপির কোন প্রমাণ সেনাবাহিনী দিতে পারেনি।

    চলতি মাসের শুরুর দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সুপার মার্কেটের কর্মী মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইং আহত হন।

    তাকে ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল, তবে শুক্রবার তিনি মারা যান।

    এরপর থেকেই ওই তরুণী বিক্ষোভ সমাবেশের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

    যারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অনেকেই ওই তরুণীর ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করছেন।

    তার মরদেহ বহনকারী কফিনটি একটি কালো ও সোনালী রঙের গাড়িতে তুলে রাস্তায় চালিয়ে নেয়া হয়।

    ওই সময় গাড়িটির সাথে অন্তত কয়েকশো মোটরবাইক ছিল।

    ছবির ক্যাপশান,
    ছবিতে দেখা যায় যে বিক্ষোভকারীরা তাদের উপর ছোড়া বুলেটের খালি কার্তুজ সংগ্রহ করেছেন।

    দেশটিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে গতকাল সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনাটি ঘটেছে।

    এরপরও রোববার সারা দেশে অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলনকারীরা আবারও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।

    পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুড়লে দু’জন প্রতিবাদকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

    এই মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দার জন্ম দেয়।

    জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন “শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ, ভয় দেখানো ও হয়রানি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

    এছাড়া রোববার দেশটির বিশিষ্ট অভিনেতা লু মিনের স্ত্রী জানিয়েছেন, সামরিক নেতৃত্বের নিন্দা জানিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করার পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

    ইয়াঙ্গনসহ মিয়ানমারের শহরগুলোর রাস্তায় অবস্থান নেয় সশস্ত্র সেনারা।

    প্রতিদিন বিক্ষোভ বাড়ছে

    বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংবাদদাতা জোনাথন হেডের বিশ্লেষণ

    মিয়ানমারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা নাগরিক আন্দোলনে এখন শহীদ যুক্ত হয়েছেন – তাদের ছবি সারাদেশের বিক্ষোভ সমাবেশে পোস্টার, পেইন্টিং এবং কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে।

    তাদের মৃত্যু সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

    আবার মানুষকে এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এই বিক্ষোভ প্রতিবাদের জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

    এখন পরিকল্পনা হল, আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতিদিনের বিক্ষোভকে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটে পরিণত করা।

    ইতিমধ্যে কোভিড মহামারীর কারণে দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এরমধ্যে ধর্মঘট শুরু হলে তা আরও আরও প্রকট হবে।

    তবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকদের উপর এর প্রভাব কেমন হবে সেটা ধারণা করা বেশ কঠিন।

    সেনা চালিত নিউজ সাইট ব্লক করেছে ফেসবুক

    পর্যবেক্ষণ দল নেটব্লকস জানিয়েছে, মিয়ানমারে গত দুই সপ্তাহ ধরে রাত্রিকালীন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

    গণবিক্ষোভ দমন করার লক্ষ্যে দেশটির সামরিক জান্তা নিয়মিত বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্লক করে চলছে।

    এর আগে বহুল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি নিউজ সাইট ডিলিট করে দেয়।

    সংস্থাটি বলছে, ” বৈশ্বিক নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ফেসবুক থেকে তাতমাডাও ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিম নামের পেইজটি সরিয়ে ফেলেছি। কারণ এই পেইজটি আমাদের সম্প্রদায়ের সম্মান বারবার লঙ্ঘন করার পাশাপাশি সহিংসতা উস্কে দিয়েছে ও ক্ষতির কারণ হয়েছে।

    সাইটটি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত প্রধান সংবাদমাধ্যম ছিল।

    এই সাইট থেকে বিক্ষোভকারীদের সতর্কতা জারি করা হতো এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তাদের অভিযোগের বিষয়টিও সেখানে তুলে ধরা হতো।

    মিয়ানমারে তথ্য এবং সংবাদের প্রাথমিক উৎস হল ফেসবুক। দেশটির ৫ কোটি ৪০ লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে।

    রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং লাইংসহ অন্যান্য শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    ছবির ক্যাপশান,
    আধুনিক ইতিহাসের বড় সময় জুড়ে মিয়ানমার শাসন করে আসছে সেনাবাহিনী।

    মিয়ানমার প্রোফাইল

    • মিয়ানমার, বার্মা নামেও পরিচিত, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীন হয় দেশটি। আধুনিক ইতিহাসের একটি বড় সময় জুড়ে দেশটি সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে।

    ২০১০ সাল থেকে দেশটির কঠোরতা ধীরে ধীরে শিথিল হওয়া শুরু করে, যার ফলে ২০১৫ সালের অবাধ নির্বাচন এবং পরের বছর প্রবীণ নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা হয়।

    ২০১৭ সালে, রোহিঙ্গা নৃগোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা পুলিশের চৌকিতে হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী কঠোর অবস্থানে যায়। তারা হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় এবং পরে জাতিসংঘ এটিকে “জাতিগত নির্মূলীকরণের বড় উদাহরণ” বলে অভিহিত করে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    কালকিনিতে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর কেটে মাটি উত্তোলন: চালককে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা

    কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার খাসেরহাট এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকালে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর কেটে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের অভিযোগে...