More

    বরিশালে প্রচন্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন, একজনের মৃত্যু

    অবশ্যই পরুন

    গ্রীষ্মের প্রখর রোদ আর প্রচণ্ড তাপদাহে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে দুপুরের দিকে রোজাদারদের দিশেহারা অবস্থা হয়। যত দিন যাচ্ছে, রোদের তেজ যেনো ততই বাড়ছে। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের উত্তাপে অস্বস্থিতে রয়েছে নদী বেষ্টিত বরিশালের প্রাণিকূল থেকে শুরু করে মানুষজন। দিনে ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। তারপরেও গরমে খানিকটা স্বস্তি এনে শরীর-মনে প্রশান্তি দেয় ডাব ও তরমুজ। কিন্তু করোনা মহামারি ইস্যুতে লকডাউনের শুরু থেকে ডাব ও তরমুজের দাম চড়া হওয়ায় নিম্নবিত্তদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে সড়কের পাশের আখের শরবত। প্রকৃতির এমন পরিস্থিতে একমাত্র স্বস্তি দিতে পারে বৃষ্টি।

    জানা গেছে, গত ১৫ দিন ধরে রোদের তাপ এতোটাই বেড়েছে যে, দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হলেই শরীরে আগুনের ছেঁকা লাগার মতো অবস্থা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুপুরে ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন তারা ঘেমে রীতিমতো হাঁপিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আর রিকশা চালকদের মাথার তালু তপ্ত আগুনের হল্কায় গরম হয়ে যাচ্ছে।

    ইতোমধ্যে প্রচণ্ড তাপদাহে অসুস্থ হয়ে গত মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল নগরীর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে রাজা মিয়া (৬৭) নামে এক রিকশা চালকের মৃত্যুবরণ করেছেন। এর আগে নিহত রাজা তার রিকশা নিয়ে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কের ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পরেন এবং কাপুনি দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেন বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহত রিকশা চালক রাজা নগরের মথুনারাথ স্কুল সংলগ্ন গলির বুলবুল মিয়ার ভাড়াটিয়া ছিলেন। তার মৃত্যু নিয়ে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আফিয়া সুলতানা জানিয়েছেন, নিহত রাজার পূর্বে কোনো ধরণের অসুস্থতা লক্ষ করা যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রোজা রেখে পরিশ্রম করায় হিটস্ট্রোক করে তিনি মারা গেছেন।

    সরেজমিনে নগরীর নথুল্লাবাদ, বিবির পুকুরপাড়, লঞ্চঘাট, পোর্ট রোড, ফলপট্টি, বটতলা বাজার, মেডিকেল কলেজ, নতুন বাজার, রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড, সাগরদী বাজারসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে, অসহ্য খরতপ্ত আর অসহনীয় ভ্যাপসা গরম-ঘামে নাজেহাল হয়ে উঠেছে এখানকার জনজীবন। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে গাছের তলায়-ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে প্রশান্তি খুঁজছেন। আবার অনেকে গরমের উত্তাপে অসহ্য হয়ে নদী-পুকুর কিংবা জলাশয়ে দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে গাঁ দেহ-মনের স্বস্তি আনছেন। এতে স্বাভাবিক কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

    আরও দেখা যায়, প্রচন্ড গরমের উত্তাপে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তপ্ত রোদ মাথায় নিয়েই পেটের টানে রিক্সা, ভ্যান ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রা নিয়ে ছুটে এসেছেন এসব বাসস্ট্যান্ডে। খেটে খাওয়া এসব মানুষজন ভাড়ার ফাঁকে সময় পেলেই গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ রিকশায় বসেই ঘুমোচ্ছেন। এমনকি প্রচন্ড গরমের প্রভাবে বাড়তি ভাড়াও হাঁকাচ্ছেন তারা।

    দুপুরের কাঠফাটা রোদে নিজেদের টেকানোর সাধ্য নেই জানিয়ে একাধিক রিকশা চালক বলেন, ‘সকাল থেকে দু’চারটি ভাড়া টানতেই সূর্যের দাপটে শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। কোনো মতে একদিন রিকশা চালালে পরেরদিন আর রিকশা নিয়ে বের হওয়ার মতো শরীরের অবস্থা থাকে না। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যেও পেটের তাগিদে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়।’

    গ্রীষ্মকালের এই সময়ে তাপমাত্রা একটু বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক জানিয়ে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির উপরে উঠলে মাঝারি এবং ৪০ ডিগ্রির উপরে উঠলে তীব্র তাপদহ শুরু হবে। সবশেষ গত মঙ্গলবার বরিশালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি মৌসুমে গত ২৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এভাবে তাপদাহ বাড়লে যেকোনো সময় বৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই আবহাওয়াবিদ।’

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    ৩৩ বছর ধরে বন্ধ লালমোহন পাবলিক লাইব্রেরী

    ভোলার লালমোহনে ১৯৯০ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন ভোলা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সবেক সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) হাফিজউদ্দিন আহেম্মেদ...