More

    ছেলের খুনির বিচার না দেখে কবর জিয়ারতে যাবে না সাগর সরওয়ারের মা

    অবশ্যই পরুন

    “আমি আমার ছেলেকে ফিরে পাব না, তাই বিচার চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি শুধু আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। আমার মৃত্যুর আগেও সাগর-রুনির খুনিদের বিচার দেখতে চাই। এখন পর্যন্ত আমার ছেলের কবর জিয়ারত করিনি।আমি কথা দিয়েছিলাম যেদিন আমার ছেলের খুনিদের বিচার দেখতে পাব, সেদিনই কবর জিয়ারত করব।তার আগে মরে গেলেও ঠিক আছে।তার পরেও। , খুনিদের না দেখে ছেলের কবর জিয়ারত করব না।

    সাংবাদিক সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মনির সারাবাংলাকে তার ছেলে হত্যার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ১১ বছর পরও সেই ৪৮ ঘণ্টার ফল শূন্য।’

    মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১১ বছর ধরে চার্জশিট দাখিল করতে না পারায় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, একের পর এক মামলার তদন্ত আসে-যায়, কিন্তু চার্জশিট জমা হয় না। গত ২/৩ বছর ধরে কেউ যোগাযোগ করেনি।

    এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী চাইলে সবই সম্ভব। সে বললে সব হবে।

    মা সালেহা মনির বলেন, মায়ের মন সব সময় ভাবে আমার ছেলে সাগর চলে (মৃত্যু) হয়েছে গতকাল। আমার ছেলে এভাবে মারা যাবে ভাবতে পারিনি। আবার এই সরকার এত দেরিতে মামলা করবে তা ভাবতেও পারেনি। র‌্যাব সব জানে, শুধু রিপোর্ট জমা দেয়। সোজা কথায়, আমি আমার ছেলের খুনি দেখতে চাই। তাদের শাস্তি হবে কিনা জানি না। কিন্তু আমি খুনিদের দেখতে চাই, তারা আমার ছেলেকে কেন হত্যা করেছে, কিসের জন্য? একজন মায়ের আর কি ইচ্ছা থাকতে পারে? খুনের পর ১২ বছর হয়ে গেছে। কত খুনের বিচার হচ্ছে, কত ক্লুলেস মামলার বিচার হচ্ছে। ৩০/৩৫ বছর পরও মামলার বিচার হচ্ছে। কিন্তু সাগর-রুনির সময় কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না।

    নিহত মেহেরুন রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, বিচার চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কী বলার আছে। মামলার কোনো অগ্রগতি নেই, সবকিছু আগের মতোই চলছে। আর মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। যা-ই হোক, মামলার বিচার চাই, আর কিছু চাই না।

    কিন্তু রুনির ছেলে মেঘ এখনো মায়ের কথা বলে। আমরা প্রতি সপ্তাহে একবার কবর পরিদর্শন করি। মেঘ এখন অনেক বড়। মাঝে মাঝে বাবা-মায়ের ছবি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। নওশের আলম বলেন, তিনি সেগুলো দেখেন।

    সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ছিল ৪ জানুয়ারি। কিন্তু ওই দিন র‍্যাবের প্রতিবেদন দাখিল করেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা। এ কারণে ঢাকা মহানগর হাকিম রশিদুল আলম প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন। এ পর্যন্ত তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯৫ দফা সময় নিয়েছে।

    ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তে প্রথম ডিবি উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম তদন্তের দায়িত্ব নেন। তারপর তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয় ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, সেই বছরের ৭ জুন, ২ অক্টোবর, ২০১৬ এবং সর্বশেষে ২১ মার্চ, ২০১৭ তারিখে। প্রায় একই তথ্য প্রতিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত.

    মামলার আট আসামির মধ্যে দুইজন গৃহরক্ষক পলাশ রুদ্র পাল ও কথিত বন্ধু তানভীর রহমান জামিনে রয়েছেন। বাকি ছয় আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম, এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কাবিল ও আবু সাঈদ কারাগারে রয়েছেন। এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ৮ জনের কেউই হত্যার কথা স্বীকার করেননি।

    ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাগর-রুনির ভাড়া বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৩ সালের আগস্টে রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মোঃ সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন ও সাগরের বন্ধু। নিহত দম্পতি তানভীর রহমান- মহাখালী বক্ষ হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র হত্যার ঘটনায় এই ৫ জনকে আটক করেছে র‍্যাব ও ডিবি পুলিশ। মামলায় এ পর্যন্ত ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‍্যাব।

    মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। এটি একটি বিতর্কিত মামলা। সেজন্য সময় লাগে।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে নারাজ বলে জানান তিনি।

    আসামিদের আইনজীবীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় পার হলেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। আসামিদের আদালতে হাজির হতে হবে। তদন্ত শেষে দোষী হলে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে, আর দোষী না হলে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি আলোচিত মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ হবে।

    উল্লেখ্য, ২০১২ সালের বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি নিজ ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু গত ১১ বছরে খুনি তো দূরের কথা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনই দাখিল করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    গণমাধ্যম কর্মী রিফাত হোসেন (জামাল) অসুস্থ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ভর্তি

    গণমাধ্যম কর্মী রিফাত হোসেন (জামাল) বেশ কিছুদিন ধরে লিভারজনিত জ্বরসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে...