গত তিন চার দিনের ভারী বর্ষণ, ঝড় হাওয়া এবং শিলা বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছে বরগুনার তরমুজ চাষিরা। কোথাও ফুল, কোথাও ফল আবার কোথাও বড় হয়ে গেছে তরমুজ। কিন্তু হঠাৎ ভারী বর্ষণে ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়ায় গাছ ও তরমুজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর এতে আতঙ্কিত ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত যে পরিমান বৃষ্টি হয়েছে তাতে তেমন ক্ষতি না হলেও এরপর আরও বৃষ্টি হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবে কৃষকরা। তাই ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে মাইকিং করে জমে থাকা পানি নিস্কাশন এবং পঁচন রোধের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ কৃষি বিভাগের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড়গুন জমিতে এ বছর বরগুনায় তরমুজ চাষ করা হয়েছে। যার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে জেলার প্রায় ১৫ হাজার কৃষক পরিবার।
কৃষকদের ভাষ্যমতে, তরমুজ চাষ লাভজনক ফসল হওয়ায় এ বছর বরগুনার কৃষকরা খুবই আগ্রহ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের যখন দারপ্রান্তে হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের সেই স্বপ্ন ভেস্তে যাওয়ার পথে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন তরমুজ ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ আর শিলা বৃষ্টিতে অধিকাংশ ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি জমেছে। তাই কৃষকরা পানি নিষ্কাশনে ক্ষেতে বেড কেটেছেন। তবুও হতাশার ছাঁপ কৃষকদের চোখে মুখে।
বরগুনা সদর উপজেলা বালিয়াতলী ইউনিয়নের হেউলিবুনিয়া এলাকার কৃষক মো. মাসুদ বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ এনে ব্যয়বহুল এ ফসল ফলানোর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে দেনাগ্রস্থ হয়ে কৃষকদের এলাকা ছাড়তে হবে।
আমতলীর চুনাখালী গ্রামের কৃষক আনসার মাদবর বলেন, আমি ১৭ কানি জমিতে তরমুজ দিয়েছি। বৃষ্টির পানিতে ক্ষেত তলিয়ে গেছে, তাই বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।
একই উপজেলার সোনাখালী গ্রামের কৃষক বারেক গাজী বলেন, ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন করেও শেষ করতে পারছি না। বৃষ্টি আরও হলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। চাষিদের পথে বসতে হবে।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, এ বছর বরগুনা জেলায় ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এবং চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৮৩৮ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৩২৬ হেক্টর বেশি। গত কয়েকদিন ধরে যে পরিমানে বৃষ্টি হয়েছে তাতে তেমন একটা ক্ষতি না হলেও সামনে আরও বৃষ্টি হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে কৃষকরা। তাই ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে মাইকিং করে জমে থাকা পানি নিস্কাশন এবং পঁচন রোধের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।