More

    সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা! বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন করল মনীষা চক্রবর্ত্তী

    অবশ্যই পরুন

    খান মনিরুজ্জামানঃবরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী।

    আজ ২৬ এপ্রিল, বুধবার বেলা ১১ টায় নগরীর ফকির বাড়ি রোডস্থ্য বাসদ’র দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মেয়র প্রার্থী বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, নিয়ম রক্ষার জন্য আবারো বরিশালসহ ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী  আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এবং আমাদের রাজনৈতিক জোট বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে জনগন তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনা সেই ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।  দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের অনুগত দলসমূহকে নিয়ে পাতানো নির্বাচনের যে আয়োজন চলছে তাতে  অংশ নিয়ে আমরা জ্বালিয়াতির নির্বাচনকে বৈধতা দিতে চাইনা। ইতিমধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে সরকারী দলের মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর আরও একটি গায়ের জোরের নির্বাচনেরই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে যে নির্বাচনে জনগন ভোট দিতে পারবেনা, সে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইনা। তাই নির্বাচন ঘোষিত আগামী ১২ জুনে হতে যাওয়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এই  নির্বাচন আমরা বর্জন করছি।একইসাথে গণতন্ত্রপ্রিয় বরিশালবাসীকে প্রহসনের এই নির্বাচন বর্জন করে ভোট,ভাত ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ না নিলেও আমরা জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবিচল থাকবো। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জিতি বা হারি জনগনের গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী হবে জনগণের সেই প্রত্যশাকে আমরা ধারণ করে জাতীয় ও স্হানীয় সকল পর্যায়ে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবী নিয়ে লড়াই করে যাব। বরিশালবাসী আমাদের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।
    এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ রাজনৈতিক বক্তব্য ও ব্যক্তি দুটোই যাচাই করে এবং ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চা এবং সংস্কৃতি-মূল্যবোধ না থাকলে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ে পড়ে জনগনের উপর দুঃশাসন চালাবার আইনি অনুমোদন নেয়া মাত্র। বিগত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন  নির্বাচন এবং তাঁর পরবর্তীতে কথিত নির্বাচিত ব্যক্তির ভুমিকা দেখে এটা বিশ্বাস করতে কারো পক্ষেই কষ্টকর হবে না।

    মনিষা বলেন, আমাদের দল বাসদের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাকে মেয়রপদে  মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল এবং আমি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই জনগণের অধিকার নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করার কারণে বরিশালবাসীর স্নেহ, ভালবাসা ও  আস্থার প্রার্থী হিসেবেও বিবেচিত হয়েছিলাম। নির্বাচন এলে  টাকা ছড়িয়ে দরিদ্র মানুষদেরকে ভোটের কর্মী বানানো  এবং ভোট কেনাবেচার যে জঘন্য কার্যকলাপ চলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার ছিলাম, তেমনি এর বিপরীতে জনগনের অর্থে জনগনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের শুদ্ধ রেওয়াজ বা প্রথা চালু করার সংগ্রাম করেছিলাম। এর অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি মাটির ব্যাংক সরবরাহ করে সেই  ব্যাংকে জমানো  টাকা সংগ্রহ করে আমরা নির্বাচনের প্রাথমিক তহবিল সৃষ্টি করেছিলাম। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতার আবেদন করেছিলাম এবং স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা পেয়েছিলাম। ফলে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা  জনগনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া তৈরি করেছিল।
    কিন্তু গত নির্বাচনের দিন সকাল থেকে সমস্ত কেন্দ্রে প্রকাশ্যে  ভোটডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সাধারণ মানুষ যখন এই দৃশ্য দেখে হতবাক ও হতাশ তখন এই জঘন্য ভোটডাকাতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে কেন্দ্রে  আমরাই রুখে দাঁড়িয়েছিলাম।

    আমিসহ আমাদের কর্মী ও এজেন্টরা ক্ষমতাসীন দলের হামলার শিকার হয়েছিল।ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া হাতেনাতে ধরেছিলাম।নির্বাচনের সার্বিক অনিয়মের চেহারা দেখে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার প্রয়াত জনাব মাহবুব তালুকদার নির্বাচন বন্ধের সুপারিশ করেছিলেন এবং নির্বাচন বন্ধ না হওয়ায় তিনি নির্বাচন শেষ না করেই ঢাকা চলে গিয়েছিলেন। গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা দেশবাসী দেখেছেন-   সকাল ৯টার মধ্যে ভোটডাকাতির নির্বাচন উন্মোচন হওয়া, মেয়রপ্রার্থী হিসেবে হামলার শিকার হওয়া এবং দুপুরের মধ্যে আওয়ামী লীগ ব্যতিত সকল  প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করা স্বত্বেও নির্বাচন বন্ধ হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট ডাকাতিতে যুক্তছিল। নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসন দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ন্যুনতম কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এসব কারণে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একটি নিকৃষ্ট নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। মনিষা বলেন,নির্বাচনের পর আমাকে নানাভাবে হয়রানি করেছ। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের উপর নানা ধরনের হামলা, আমাদের পার্টি অফিস নিয়ে হয়রানি করা, আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা, আমাদের শ্রমিক সংগঠনের উপর উপর্যুপরি নিপীড়ন করেছিল ক্ষমতাসীনরা।

    তিনি বলেন,শুধু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনই নয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনেও দেশবাসীসহ আমরা প্রহসন ও প্রতারণা দেখেছি। দিনের ভোট রাতে হওয়ার ঘটনা ব্যাপক প্রচার পেয়েছে এবং জনগণও তা বিশ্বাস করেন। তাই দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নয়, নিরপেক্ষ  তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট সারাদেশে আন্দোলন পরিচালনা করছে। পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবিতেও  আন্দোলন গড়ে তুলছে সারা দেশে।তথাকথিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নানা ধরনের বাগাড়ম্বর আমরা কমিশনের কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু তাঁরা এখনও তাদের কাজে স্বচ্ছতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয় নি।  কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গণনায় টেলিফোন কল বিতর্ক,  গাইবান্ধায় উপ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির  চাক্ষুষ প্রমাণ, চট্টগ্রামে ইভিএম মেশিনের ডিসপ্লে বোর্ড নিয়ে আওয়ামী সমর্থকদের বুথের বাইরে চলে যাওয়া এবং প্রায় সবকটি উপনির্বাচনে বেআইনি কার্যকলাপ হলেও  দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ আজও করা হয়নি।  ফলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার সদিচ্ছা এবং সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার।

    নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসবের ফলাফল জনমনে হয়েছে নেতিবাচক।  জনগন ক্রমাগত  নির্বাচনগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যা বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে।  সাম্প্রতিক সময়ের উপনির্বাচনগুলিতেও বেশিরভাগ জায়গায় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৩০ শতাংশের কম, এমনকি ঢাকা ৫ ও ঢাকা ১৮নং আসনের উপনির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ছিল মাত্র ১০% ও ১৪% যা এই নির্বাচন কমিশনের উপর জনগনের অনাস্থারই পরিচায়ক। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, কোন প্রতিষ্ঠানই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা, ফলে  নির্বাচন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করবে সে আশা দুরাশা ছাড়া কিছুই না।  সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোন পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচনগুলিতে আওয়ামী জোটের বাইরে প্রায় কোন বিরোধী দলই অংশগ্রহণ করছেনা। মূলত মহাজোটভুক্ত দলগুলিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ একধরনের জনবিচ্ছিন্ন তামাশার নির্বাচন করছে। যা নির্বাচনকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করছে না নির্বাচনী সুষ্ঠু প্রক্রিয়া পদ্ধতিকেও ধ্বংস করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হয়ে গেছে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলীয় মাস্তান বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার কোন সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না।

    মনিষা বলেন,বরিশালের জনগনের অধিকার আদায়ে গত ১৫ বছর ধরে আমরা লড়াই-সংগ্রামে আছি। হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো, খাল-রাস্তা-ড্রেন সংস্কারের দাবি, ব্যাটারিচালিত যানবাহনের পার্কিং স্ট্যান্ড-লাইসেন্সের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে আমরাই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করেছি। করোনা মহামারিতে আমরাই বরিশালে প্রথম ত্রাণ বিতরণ শুরু করি এবং মানবতার বাজার নামে নতুন ধরনের সহায়তা কর্মসূচী চালু করে  পাঁচ মাস ধরে  হাজার হাজার  মানুষের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।  করোনা  মহামারীর হাত থেকে মানুষকে  বাঁচাতে আমরাই প্রথম অক্সিজেন ব্যাংক ও করোনা এম্বুলেন্স এবং করোনা রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা চালু করি এবং আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাড়ান। যেসময় করোনা মহামারির ভয়ে অনেক জনপ্রতিনিধি কোথায় আছেন সে  অবস্থানও জানা যায়নি সেসময় আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে জনগনের পাশে ছিলাম। ফলে আমাদের প্রতি জনগনের আস্থা আছে, প্রত্যাশা আছে এবং জনগণের প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে একটি লোক দেখানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চাকে কলুষিত করার শরিক আমরা হতে পারি না।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    পটুয়াখালীতে আইনজীবিকে পি’টি’য়ে ও কুপিয়ে জখম

    অনলাইন ডেস্ক:পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আনোয়ার হোসাইন (৪৮) নামে এক আইনজীবীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। এতে আনোয়ারের বাম...