আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একদিনে পৃথক ঘটনায় পৃথক দুটি যৌতুক মামলায় স্ত্রী
নির্যাতনকারী দুই স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, উপজেলার
পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের মৃত সেকেন্দার সরদারের ছেলে হেলাল সরদারের (২৬) সাথে
গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম শাওড়া গ্রামের জামাল চোকদারের মেয়ে মীম আক্তার (২৬)
এর সাথে আট বছর পূর্বে বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি সন্তান রয়েছে।
বিয়ের কয়েক বছর পর ব্যবসা করার নাম করে হেলাল স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি থেকে ৪
লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। প্রথমে মীম তাতে রাজি না হওয়ায় শাশুড়ির
কথায় মীমের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলাতে শুরু করে স্বামী হেলাল।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে মীমের সুখের জন্য তার বাবা মীমের স্বামী হেলালের হাতে
২ লাখ টাকা তুলে দেয়। হেলাল ওই টাকা দিয়ে কোন ব্যবসা না করে টাকা খরচ করে
ফেলে। এর কিছুদিন পরেই শাশুড়ির প্ররোচনায় স্বামী হেলাল পুনরায় ব্যবসা করার
নামে মীমের বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের বাকি ২ লাখ টাকা এনে দিতে বলে।
মীম স্বামীকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে শাশুড়ি
লুৎফুন্নেসার প্ররোচনায় স্বামী হেলাল মীমকে এলোপাথারী মারধর করে ফেলে রাখে।
মীম তার বাবার কাছে ফোনে ঘটনা জানালে তারা এসে মীমকে উদ্ধার করে উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এই ঘটনায় নির্যাতীতা মীম আক্তার বাদী হয়ে শাশুড়ি লুৎফুন্নেসা ও স্বামী
হেলালকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা
উপপরিদর্শক (এসআই) মো. তারিকুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে সোমবার রাতে
অভিযুক্ত স্বামী হেলালকে গ্রেপ্তার করে।
অপরদিকে উত্তর শিহিপাশা গ্রামের আচমত আলী মোল্লার মেয়ে লামিয়া আক্তারের
(২৩) সাথে পার্শবর্তি উজিরপুর থানার খাটিয়ালপাড়া গ্রামের রিয়াজ হাওলাদারের
ছেলে রুবেল হাওলাদারের (২৫) সাথে ৬ বছর পূর্বে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের
দাম্পত্য জীবনে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
দাম্পত্য জীবনে সুখের মধ্যে লামিয়ার শশুর রিয়াজ হাওলাদার (৫০) ও দেবর রুম্মান
হাওলাদারের (২২) কথায় স্বামী রুবেল মীমকে বাবার বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা
যৌতুক দাবি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। মেয়ের সুখের কথা
চিন্তা করে লামিয়ার বাবা রুবেলকে যৌতুক বাবদ ৩ লাখ টাকা প্রদান করে।
এর কয়েকমাস পরে যৌতুকের বাকী ২ লাখ টাকার জন্য লামিয়াকে পুণরায়
নির্যাতন শুরু করে স্বামী রুবেল। লামিয়া টাকা এনে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে
লামিয়াকে মরধর করে।
পরে নিরুপায় হয়ে লামিয়া বাবার বাড়িতে এসে ওঠে। এরই মধ্যে স্বামী রুবেল
লামিয়ার বাবার বাড়িতে এসে যৌতুকের বাকি টাকা দিতে বলে। লামিয়া টাকা
দিতে অস্বীকার করায় লামিয়াকে বেদম মারধর করে পালিয়ে যায় স্বামী। লামিয়াকে
উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার পরিবারের লোকজন।
এঘটনায় লামিয়া আক্তার বাদী হয়ে স্বামী রুবেল হাওলাদার, রশুর রিয়াজ এবং দেবর
রুম্মানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক
(এসআই) মিজানুর রহমান মিশু অভিযান চালিয়ে নির্যাতনকারী স্বামী রুবেল
হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত হেলাল সরদার ও রুবেল হাওলাদারকে বরিশাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে
প্রেরণ করা হয়েছে।