আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ
তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারনে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদর থেকে গ্রামে লোডশেডিং আরো ভয়াবহতা বিরাজ করছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকা ভিত্তিক দিনে রাতে মোট আট থেকে দশ বার করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে করে লোডশেডিং এর কারনে দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে সাধারন মানুষদের।
আগৈলঝাড়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার জিহাদুল ইসলাম জানান, উপজেলার প্রায় ৫২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের বর্তমানে বিদ্যুৎ এর চাহিদা এগারো মেগাওয়াট থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৫ থেকে ৬ মেগাওয়াট। এছাড়া পায়রা কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট সম্পন্ন দুইটি ইউনিট চালু থাকলেও
দেড় মাস পূর্বে কয়লা সংকটের কারনে একটি বন্ধ হয়ে যায়। অপর ইউনিটটি বর্তমানে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও দুই একদিনের মধ্যেও সেটি বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারনে এই এলাকায় লোডশেডিং এর তীব্রতা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া গত কয়েক দিন ধরে ঘনঘন লোডশেডিং সংকটে জীবনের অচলাবস্থা
বিরাজ করছে। গতকাল রোববার আগৈলঝাড়া উপজেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখা
গেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অফিস আদালতে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক গুন। এই বাড়তি চাহিদা পুরণ করতে পারছে না বিদ্যুৎ অফিস। তাই এলাকা ভিত্তিক শুরু হয়েছে লোডশেডিং।
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সর্বত্র দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারনে বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভয়াবহ তাপপ্রবাহের কারনে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প—কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা, ব্যাংকিং সেবা, শিক্ষা ও গৃহস্থালির কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসা—বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা।
সন্ধ্যার পর পরই উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট—বাজার জনশূন্য হয়ে পড়ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে টেলিভিশন, ফ্রিজ, মটর, কম্পিউটারসহ যান্ত্রিক ও ইলেকট্রিক সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে রাতে চার্জ দিতে না পারায় উপজেলার অসংখ্য ইজিবাইক চালকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদিকে গরমের কারণে বেড়ে গেছে বিদ্যুতের চাহিদা। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারার কারণে উপজেলার সর্বত্র চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারনে ইন্টারনেট সংযোগেও দেখা দিয়েছে বিভ্রাট। ফলে সংবাদকর্মীদের সংবাদ পাঠাতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
উপজেলার দক্ষিণ বাকাল গ্রামের ব্যবসায়ী জীবন হালদার জানান, শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত আট থেকে দশ বার লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। এতে করে লোডশেডিং এর কারনে দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
বাশাইল গ্রামের গৃহীনি রোকেয়া বেগম জানান, রাতে বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং এর কারনে ঘরে ঘুমাতে না পেরে পরিবার নিয়ে বাধ্য হয়ে বাহিরে রাত যাপন করতে হয়েছে।
উপজেলার পাকুরিতা গ্রামের তপন বাড়ৈ জানান, শনিবার রাতে তিন বার ও গতকাল রোববার দিনে একবার করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে প্রতিবারে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা করে লোডশেডিং ছিল।
ছয়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা কবির হাওলাদার জানান, রাতে দিনে মিলিয়ে মোট পাঁচবার লোডশেডিং দেয়া হয়েছিল। গৈলা রথখোলা বাজারের ব্যবসায়ী মামুন সরদার জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যার
দিকেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আসছে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর। এই ঘটনা একবার নয় দিনে রাতে কয়েকবার।
সন্ধ্যার পর এবং রাতে কয়েকবার দেড় ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একতো তাপপ্রবাহ আবার তীব্র লোডশেডিং এর কারণে অস্বস্তিকর গরম অনুভূত হচ্ছে।
আগৈলঝাড়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) অসিত কুমার সাহা বলেন, চলমান তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি। এছাড়া উপজেলায় বর্তমানে বিদ্যুৎ এর চাহিদা এগারো মেগাওয়াট থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৫ থেকে ৬ মেগাওয়াট। যা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম।