বরিশালে বাস-লঞ্চ, স্পিড বোট, থ্রি হুইলার, অটোরিকশা বন্ধের পর বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। খেয়া নৌকা বন্ধের পর কার্যত অবরুদ্ধ বরিশাল নগরী। সড়ক ও জলপথে শহরে প্রবেশ করা এখন সম্পূর্ণ অসম্ভব। তাই দলের সমাবেশের একদিন আগে কেউ শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। সাধারণ যাত্রীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।
এরই মধ্যে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী বেলস মাঠে এসে পৌঁছেছেন। শনিবার (২৪ জুনের) সমাবেশে যোগ দিতে আরও লাখ লাখ নেতাকর্মী বরিশালে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তারা বিভিন্নভাবে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরে প্রবেশের সব পথই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। শহরে ঢুকলেই তল্লাশি করা হবে। এছাড়া নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মিছিল অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সারা শহরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করছে দলটির ছাত্র সংগঠন। ক্ষমতাসীন দলের প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মীই এখন বরিশালের রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। এ অবস্থায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকাল থেকে শহরের চরকাউয়া খিয়া ও কাটাদিয়া খিয়া বন্ধ রয়েছে। এই নৌকায় চব্বিশ ঘণ্টা হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। হঠাৎ খেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। যার কারণে পুরো শহরে কার্যত বন্দি মানুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগী গাড়িতে থাকলেও প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
সর্বশেষ খেয়াঘাট বন্ধের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে শনিবার বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সব রুটে বাস, লঞ্চ ও থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, সমাবেশের দুই দিন আগে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের (বেলস পার্ক) মাঠের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা রান্নাবান্না করে সেখানে বসে উৎসবমুখর পরিবেশে খাওয়া-দাওয়া করেন। এ সময় সবাই ছিল উৎসবের আমেজ। শুক্রবার বিকেলে জুমার নামাজের পর উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুকে ভাত দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে প্যান্ডেলে তার পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। খিচুড়ির আয়োজন চলছে সর্বত্র। অনেকেই জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা রান্নার সরঞ্জাম ও বাবুর্চি নিয়ে এসেছেন। আবার কেউ কেউ বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার নিয়ে আসছেন।
বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলা থেকে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী এসেছেন। তাদের সবার জন্য খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা দুই দিনের রান্নার সব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. স্বপন হাওলাদার বলেন, দুই দিন আগে যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় সকল ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভাস্থলে উপস্থিত হই। এখন সবার জন্য রান্না চলছে। জুমার নামাজের পর আমরা সবাই মাঠে বসে খেয়ে নিলাম। বরগুনা জেলা যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক রনি আহমেদ নাসির বলেন, অনেক নেতাকর্মী একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া যেন উৎসবের মতো। প্রখর রোদে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তারপরও সমাবেশ সফল করতে যেকোনো কিছু মেনে নিতে রাজি। এ ছাড়া সমাবেশস্থলে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা প্রখর রোদ উপেক্ষা করে মাঠের আশপাশে গাছ ও তাঁবুর নিচে আশ্রয় নিচ্ছেন এবং সাধ্যমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এর আগে বেলস ফিল্ডে জুমার নামাজের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। জামায়াতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নেন।
নামাজ শেষে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ড.এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, শনিবারের গণসমাবেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সকল বাধা উপেক্ষা করে শহীদ জিয়ার সৈনিকরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছে। পথে নানা বাধা বিপত্তি। সরকারি দলের কোনো উসকানিতে আমরা পা দেব না। আশা করছি শনিবারের গণসমুদ্রে পরিণত হবে জনসমুদ্র। গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে জনসভায় যোগ দিতে বরিশাল উড়ে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার একটি ফ্লাইটে তিনি বরিশালে পৌঁছান। যাত্রাকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার গণপরিবহনসহ সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য কোন উপায় নেই। বিকেল সাড়ে চারটার ফ্লাইটে বরিশাল যাব।
৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় জনসভাকে ঘিরে হঠাৎ করেই উত্তেজনা বাড়ছে।গত সোমবার থেকে বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে সমাবেশ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে দলটির নেতারা বলছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডে পদযাত্রা করেন। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই মহানাগের পক্ষ থেকে বাইক শোভাযাত্রা করা হচ্ছে