বিদ্যুৎ যখন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারেনি মানুষ তখন রাতের আধারকে সরানোর জন্য হেরিকেন, কেরোসিনের কুপি ও বড় বড় অনুষ্ঠানে হেজাক লাইট স্থান দখল করেছিল। মানুষের জীবন যাত্রায় বিদ্যুৎ ধীরে ধীরে অনুপ্রবেশ করেছে এখন বিদ্যুৎ বিহীন ছিটেফোটা গ্রাম থাকতে পারে। যেখানে এই সকল পুরাতন হেরিকেন, কেরোসিনের কুপির ব্যবহার করলেও শহর জীবনে এর বিলুপ্তি ঘটেছে অনেক আগেই।
স্মার্ট ডিজিটাল যুগে মানুষ এখন বিদ্যুৎ এর সাহায্যে অত্যাধুনিক বিলাসী বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম টিভি, ফ্রীজ, এসি, বাহারি বৈদ্যতিক বাতি ব্যবহার করে জীবনযাত্রার মান ঊর্ধ্বমূখী। ঝালকাঠি জেলা শহরে হাসপাতাল সংলগ্ন প্রধান সড়কে মুজিবুর রহমান খান নামের এক ক্ষুদ্র চা পানের দোকান মালিক ৩০ বছর ধরে কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে কেনাবেচা করছে। অথচ তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নে নুরুল্লাপুর গ্রামের বাড়িতে পল্লি বিদ্যুৎ এর সাহায্যে আলোকিত তার পরিবার। প্রতিদিন সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে এসে দোকান খুলেন এবং সন্ধা হলে কুপি জ্বালিয়ে রাত ৯—১০টা পর্যন্ত দোকান করে জিনিষপত্র গুছিয়ে বাক্স বন্দি করে রেখে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকান এর কোন হোল্ডিং নেই সেকারণে তার বিদ্যুৎ এর কোন লাইন নেই।
পাশের দোকান থেকে একটি বাতি জ্বালিয়ে দোকানদারী করবেন কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের পার্শ্ব লাইন দেওয়ার বিধান না থাকায় তার পক্ষে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব নয় তাই কেরোসিনের কুপিই তার ভরসা। মুজিবুর রহমানের ৩০ বছরের এই দোকান পরিচালনার জীবনে ৩০০ থেকে ৪০০ বার হয় দোকান ভেঙ্গেছে নতুবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা এবং কিছুদিন পর আবার দোকান খুলেছে ও বন্ধ হয়েছে এইভাবেই রাস্তার পাশের এই দোকানী মুজিবুর রহমানের জীবন। প্রতিদিন কুপি জ্বালাতে গিয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকার কেরোসিন পুড়তে হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারলে তার খরচ হয়তো দৈনিক ৫ টাকার বেশি খরচ হতো না। এইভাবেই ধারনা করা হয় এই শহরে আধুনিক জীবন যাত্রায় মজিবুর রহমানই একমাত্র কেরোসিন ব্যবহারকারী কুপি ওয়ালা।
মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, দোকান চালাতে পারলে দৈনিক তার ৫০০ টাকার মত আয় হয়। তার সংসারে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে রাকিব খান ও শাকিব খান এইচ এস সি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে এবং মেয়ে শান্তা বর্তমানে পোনাবালিয়া আাফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। স্বল্প আয় দিয়ে তিনি ছেলে—মেয়েদেরকে লেখাপড়া করানো চেষ্টা করছে। তবে সব সময় তার ভিতরে একটি অজানা আতংক থাকে হয়তো প্রশাসনের কর্মকর্তারা আবারও রাস্তার পাশের এই দোকান কারো কোন ক্ষতির কারণ না হওয়া সত্বেও ভেঙ্গে অথবা বন্ধ করে দিতে পারে।