ঝালকাঠিতে নগর বন্যা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ পরিস্থিতি সভায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম সভাপতিত্ব করেন। সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাজিয়া আফরোজ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শিবলি মামুন, ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব লিয়াকত আলী তালুকদারসহ দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ঝালকাঠি পৌরসভা মরে যাওয়া প্রবাহমান খালগুলি পুনরুদ্ধার করে পৌরসভার নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করার আহ্বান ও মৎস্য, কৃষিসহ বিভিন্ন সেক্টরে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ঝালকাঠি পৌরসভার কয়েক হাজার নাগরিককে চরম দুভোর্গে পোহাতে হচ্ছে। অতি ও টানা বৃষ্টির কারণে শহরের ৯০ভাগ সড়ক পানিতে তলিয়েছে। ঝালকাঠি পৌরসভা অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে শহরের পানি দ্রুত নিষ্কাসন হচ্ছে না হওয়ায় ভয়াবহ নগর বন্যা হয়েছে। ফলে ড্রেন সংলগ্ন দোকানপাট, বসত বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ঝালকাঠি শহরে এক সময় শহর সংলগ্ন সুগন্ধা, বাসন্ডা নদীর উৎস থেকে ১১টি প্রবাহমান খাল ছিল যেখান থেকে ভাড়ি—ভাড়ি(৫শ—৬শ মন) মালা মাল নিয়ে এই খাল দিয়ে শহরের কেন্দ্রে প্রবেশ ও বাহির হতো। কিন্তু প্রায় ৩দশক ধরে পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতার চরম অবহেলা ও পৌর নাগরিকদের মধ্যে এক শ্রেণির লোভি ও অসাধু নাগরিক খাল ভড়াট করে দখল করায় ১১টি খাল বিলুপ্ত হয়ে ড্রেনে রূপ নেয়। হাতে গোনা পূর্বচাঁদকাঠী ও থানার খালের কিছু অংশ এখনও খাল রূপে দৃশ্যমান।
একই কারণে বিরামহীন ভারী বৃষ্টি ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ঝালকাঠি জেলার ৪টি উপজেলার অপেক্ষকৃত নিচু এলকার ৩০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে নিচু অঞ্চল হিসেবে কাঁঠালিয়া উপজেলার ১১ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে এই উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের ডালির খালের বাঁধ। ফলে তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে বাধঁ সংলগ্ন এলাকা। জোয়ার ভাটার অঞ্চল হওয়ার কারণে প্লাবিত হয় এবং ভাটার সময় মেনে যায় পানি। এই অবস্থা চলছে সপ্তাহ ব্যাপি। অতীতের শ্রাবণে একটানা ৭দিন বৃষ্টিপাতের আমেজ উপভোগ করছে নতুন প্রজন্ম। কিন্তু খাল—বিল নদী নালা ভড়াট হয়ে সংকুচিত হওয়ায় বিপাকে পরেছে এই প্রজন্মের মানুষ।
পাকা আউশ ও আমনের বীজতলাসহ কৃষকের বিভিন্ন ধরনের ফসলের মাঠ পানিতে ডুবে আছে। তবে কৃষি বিভাগ আশা করছে যেহেতু জোয়ার ভাটার কারণে পানি দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। ঝালকাঠি শহর ও প্লাবিত এলাকার ভেসে গেছে পুকুর, হ্যাচারি সহ বিভিন্ন জলাশযের মাছ। জেলা মৎসবিভাগ তথ্য মতে এতে প্রায় ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জোয়ার ও বিরামহীন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের কাঁচা পাকা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, গোয়ালঘর, গবাদি পশুর খাবার, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের রান্না ঘরের চুলায় পানি ঢুকে পড়ায় ওই পরিবারগুলো রান্না করতে পারেনি। ফলে ৪টি উপজেলার ৩০ টি গ্রামে মারাত্মক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।