আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নগড়বাড়ি গ্রামের মৃত করিম শাহ’র মেয়ে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ রাশিদা হত্যা মামলায় তার ঘাতক স্বামী তামিম শেখ ও স্বামীর সহযোগী রুবেল শেখকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে বরিশালের জেলা ও দায়রা জজ কেএম রাশেদুজ্জামান রাজা’র আদালত ঘাতক স্বামীসহ তিন আসামীর উপস্থিতিতে এই আদেশ প্রদান করেছেন বলে বুধবার সকালে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী কামরুল ইসলাম।
ওই আদালতে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় একজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছে আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলো নিহত রাশিদার স্বামী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামের মৃত আনোয়ার শেখের ছেলে তামিম শেখ (৪৩) ও কোটালীপাড়া উপজেলার বেপারীপাড়ার মৃত ইদ্রিস শেখের ছেলে রুবেল শেখ (৪১)। আদালতে খালাস পাওয়া অপর আসামী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামের মৃত সালাম শেখের ছেলে মাহেন্দ্র চালক জুলহাস শেখ। আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দাম্পত্য বিরোধের জের ধরে আগৈলঝাড়া উপজেলার ১নং ব্রীজ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করা গৃহবধূ রাশিদাকে তার স্বামী তামিম শেখ ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারী ফোন করে গোপালগঞ্জ যেতে বললে রাশিদা তার দশ মাসের শিশু পুত্র তনিমকে নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরে যায়। গোপালগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল ‘রোহান’ এর ২০৭ নম্বর কক্ষে তারা অবস্থান করে। ওই দিন রাতের খাবার খেয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে হোটেল থেকে নেমে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামী তামিমের বন্ধু হত্যাকারী রুবেল ও মাহেন্দ্র চালক জুলহাস এর মাহেন্দ্রতে করে সদর থানার ঠুটামান্দ্রা বিলের মধ্যে নিয়ে যায় রাশিদাকে। জনশুন্য ওই বিলে রাশিদাকে মাহেন্দ্র থেকে নামিয়ে রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে রুবেল দাড়িয়া। ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে রাশিদাকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে ঘাতকেরা।
এর আগে ঘাতক স্বামী তামিম তার স্ত্রী রাশিদাকে হত্যার জন্য তার বন্ধু রুবেল ও জুলহাসের সাথে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনায় চুক্তি করে। তবে চুক্তির কোন টাকা রুবেল ও জুলহাসকে দেয়নি বলে পুলিশকে জানিয়েছিল ঘাতক স্বামী। রাশিদাকে হত্যার পরে ওই রাতেই বরিশাল—গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস এলাকায় একটি ঘেরের পাড়ে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতকেরা। খবর পেয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম রাতেই রাশিদা বেগম (৩৫) এর রক্তাক্ত লাশ এবং লাশের পাশে থাকা দশ মাস বয়সী শিশু তনিমকে উদ্ধার করেন। রাশিদা হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই আল আমিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে আগৈলঝাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে ৩ ঘন্টার মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার বেদগ্রাম থেকে ওই গ্রামের আনোয়ার শেখ এর ছেলে ঘাতক স্বামী তামিম শেখকে রক্তমাখা জুতা, জামাপড়া অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছিলেন। অপর দুই আসামীকেও আট ঘন্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত তিন জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। নিহত রাশিদার এটা দ্বিতীয় বিয়ে ছিল এবং ঘাতক স্বামী তামিমেরও দ্বিতীয় বিয়ে। দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তামিমের আগে স্ত্রীর দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে, রাশিদার ঘরে ১০ মাস বয়সী তানিম নামের একটি পুত্র হয়। রাশিদা তার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলার ১নং ব্রীজ সংলগ্ন এলকায় শিশু পুত্র নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।