কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম এর সম্মেলনকে সামনে রেখে সবুজ ও ন্যায্য রূপাস্তরের দাবিতে সোমবার সকাল ১১টায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্দারমানিক নদীর তীরে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যৌথভাবে এই জমায়েত আয়োজন করেছে বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (ডব্লিউজিইডি), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও প্র্ররিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), প্রান্তজন, কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং আমরা কলাপাড়াবাসী।
কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চের সদস্য সচিব এবং কলাপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রেখেছেন মঞ্চের সদস্য এবং কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক এস, এম, মোশারফ হোসেন মিন্টু, মঞ্চের সদস্য এবং প্ররিবেশ কর্মী মেজবাহ উদ্দিন মাননু, মঞ্চের সদস্য নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু, মঞ্চের সদস্য মিলন কর্মকার রাজু, জসীম পারভেজ, আমরা কলাপাড়াবাসী এর প্রতিষ্ঠাতা আল ইমরান এবং বর্তমান সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন যে, চীনা ঋণের সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। চীনা ঋণের আওতায় জীবাশ্ম জ্বালানিতে সকল বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বাস্তবায়িত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকার রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ও আহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ করতে হবে। বক্তরা আরো বলেন, আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে চীনের বেইজিংয়ে তৃতীয় সম্মেলন শুরু হবে, ১৯০টির ও বেশি দেশকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে এই সম্মেলনে। ২০১৬ সালে চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্র্রকল্পে যোগ দেয় বাংলাদেশ। অনেকের ধারণা চীন এই প্র্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত এবং দরিদ্র দেশগুলোতে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চায়।
এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর। এছাড়াও লাওস, অ্যাংগোলা, জিবুতি, কেনিয়া, মালদ্বীপ্র্র, পকিস্তান ইতিমধ্যে চীনের ঋণের ফাঁদে পড়ে গিয়েছে। এই প্র্রকল্পের অর্থায়নে যাতে বাংলাদেশকে কোনও ঋণের জালে জড়িয়ে না ফেলে সে দিকেও বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। এইআইয়ের চায়না গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ট্র্যাকারের পরিসংখ্যান অনযুায়ী, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চীনা ঠিকাদারদের কাজের ব্যাপ্তি ৯০২ কোটি ডলার।
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮১১ কোটি ডলারের কাজ পেয়েছে চীনা প্র্রতিষ্ঠানগুলো। আবাসন, কৃষি , প্র্রযুক্তি ও ইউটিলিটি খাতে এর পরিমাণ যথাক্রমে ২৩৬, ১২৮, ১১৩ ও ১০৪ কোটি ডলার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, যার পরিমাণ ৩২৭ কোটি ডলার। বক্তারা আরো বলেন যে, বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) উন্নয়নের নামে বিশ্বব্যাপ্র্রী অর্থনৈতিক কর্তৃত্ত¦ প্র্রতিষ্ঠা ও চীনের নিজস্ব বাণিজ্য সুসংহত করার পরিকল্পনায় মত্ত।
উন্নয়নের নামে বাংলাদেশকে প্রকাশ্য ও গোপন ঋণের ফাঁদে ফেলে সুদ বাণিজ্য হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত। জ্বালানী স্বয়ংসম্পূর্ণ করার নামে জীবাশ্ম জ্বালানিতে তার বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলার পাশাপাশি দেউলিয়করণের দিকে ধাবিত করানো। বিনিয়োগকৃত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকারের দিকে তোয়াক্কা না করে প্র্রকল্প বাস্তবায়ন করা।
প্রায় ২০০০ বছর আগে হান রাজবংশের সময় প্র্রতিষ্ঠিত ‘সিল্ক রোড’ এর ধারণা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ২০১৩ সালে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামে একটি মেগা প্র্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এই প্র্রকল্পের আওতায় বিশ্বজুড়ে দরিদ্র দেশগুলোর অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন আধিপত্য বিস্তার করে চলছে।