পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎসব রয়েছে বুধবার সকাল আটটা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টায় ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কিছু কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু অধিকাংশ কেন্দ্র ভোটার উপস্থিতি একে বারের কম। দুপুর বারোটায় চরচাপলী ইসলমিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ১৯৩৪ জন ভোটারের মধ্য ৪০১ জন ভোট প্রদান করেছেন।
কলাপাড়া নেছারউদ্দিন কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র প্রথম ১ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৮৫ টি। বালিয়াতলী ইয়াকুব আলী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৪ হাজার ২ শত ৮ জন ভোটারের মধ্যে ২ ঘন্টায় ভোট পরছে ৪১৮ টি। এছাড়া ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ ঘণ্টায় ৬.৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
হেলিকপ্টার যোগে এসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মোহিবুর রহমান ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা লাইনে দাঁড়িয়ে এ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। বালিয়াতলী ১০:৪৫ মিনিটে ভোট দিয়ে আবার ১১ টায় হেলিকপ্টার করে ঢাকা চলে যান। বালিয়াতলী ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামের সাফিয়া বেগম (৩৫) জানান, ভোটের পরিবেশ অনেক সুন্দার ভোট দিতে কোন সমস্যা হয়নি।
বড় বালিয়াতলী গ্রামের সত্তরউর্ধ ইসহাক প্যাদা জানান, ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে হাত ভেঙে গেছে তা নিয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন, তিনি একটি ভোট অনেক মূল্যবান, ভোট দেওয়ার নাগরিক অধিকার তাই তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে ভোট দিতে এসেছেন। তিনি ভোটের পরিবেশ ভাল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এরা হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব তালুকদার (ঘোড়া প্রতীক), টিয়াখালী ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আকতারুজ্জামান কোক্কা (দোয়াত কলম) এবং যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আল সাইফুল সোহাগ (আনারস)।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। এ নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের কোন প্রার্থী নেই। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী নির্বাচনকে ঘিরে কলাপাড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচনে বিজয়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসবে এমন আশা করে সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট নির্বাচিত এ কথা জানান ভোটাররা । ভোটাররা জানান, ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রয়েছে। সারাদিন যদি এমন পরিবেশ বিরাজ করে, তবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবেন তারা।
তবে ঘর্ণিঝড় রিমালে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা, বেরিবাঁধ ভাঙা রয়েছে। কেন্দ্র গুলোও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হলেও নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে এমনটাই আশা করছেন নির্বাচন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৭২ জন পুরুষ ভোটার, ১ লাখ ১ হাজার ৫০ জন নারী ভোটার এবং ৩ জন তৃতীয় লিঙ্গ( হিজড়া) ভোটার রয়েছেন।
’ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতি কেন্দ্রে ৫ জন পুলিশ সদস্য ১৪ জন আনসার সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। ’অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিপন্থি কর্মকাণ্ড রুখে দিতে ১২টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ জানান, কলাপাড়ায় ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ৭৪টি। এর মধ্যে ৪০টি ভোট কেন্দ্র অধিক ঝূঁকিপূর্ন, ৩৪টি কম ঝূঁকিপূর্ন। সবগুলো কেন্দ্রকে ঝূঁকিপূর্ন বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের জন্য পুরো নির্বাচনী এলাকাসহ ভোট কেন্দ্র গুলোতে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড সদস্যরা। তিনি আরও জানান, প্রতি ভোট কেন্দ্রে একজন উপ পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে চার সদস্যের পুলিশ সদস্য ও ১০ জন আনসার সদস্য।
এর বাইরে থাকবে পাঁচ সদস্যের টহল পুলিশ টিম। প্রতি ইউনিয়নে একজন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে থাকবে ১০ সদস্যের পুলিশ স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাব ও বিজিবি’র স্ট্রাইকিং ফোর্স। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, এ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই শান্তি পূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হবে।