মোঃ রোকনুজ্জামান শরীফ , পিরোজপুর প্রতিনিধি:
প্রিয় মঠবাড়ীয়া পৌরবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
পৌরসভার পানি সাপ্লাই নিয়ে আপনাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির বিষয়ে কিছু কথা জানানো প্রয়োজন।
বিষয়গুলো অবগত হলে এ সংক্রান্ত দায়দায়িত্ব নিরূপণ করা অথবা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সহজ হবে।
১. আপনারা জানেন ২০২১ সালে একান্ন কোটি বিয়াল্লিশ লাখ টাকা ব্যয়ে সূর্যমনিতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়।
২. উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্ল্যান্ট নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ছাড়া চালানো দুরূহ এবং ব্যয়বহুল। এমনকি বিদ্যুতের সঠিক ভোল্টেজ না থাকলে মটর আদৌ চালানো যায় না। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সঠিক ভোল্টেজের জন্য সার্বক্ষণিক পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মঠবাড়ীয়া উপজেলায় কতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে তা আপনারা অবগত রয়েছেন।
৩. বিকল্প হিসেবে প্ল্যান্টে একটি জেনারেটর রয়েছে। উক্ত জেনারেটর কিছুক্ষণ চালানো হলে অত্যধিক গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। একাধিকবার মেরামত করেও এটি পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য এটি স্থাপনের জন্য প্রায় কোটি টাকার মতো অর্থ ব্যয় হয়েছিল। অথচ মানসম্পন্ন একটি জেনারেটর এত অল্প সময়ের মধ্যে বিকল হওয়ার কথা নয়।
৪. তদুপরি বিদ্যুৎ না থাকলে অথবা প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ না পাওয়া গেলে জেনারেটর দিয়ে (যতক্ষণ সচল থাকে) পানির মটর চালু রাখা হচ্ছে।
৫. এক্ষেত্রে একটি সাইকেল পানি দেওয়ার জন্য প্রায় ৯(নয়) ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা আবশ্যক। এই নয় ঘণ্টার মধ্যে লোডশেডিং হলে পরিপূর্ণভাবে পানি দেওয়া ব্যহত হয়। অর্থাৎ দুইবার পানি সরবরাহ করার জন্য প্রায় ১৮ ঘণ্টা মটর চালাতে হয়।
৬. পৌরসভার ৭ এবং ৮ নং ওয়ার্ডে দুটি ওভারহেড ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। ওয়ার্ড দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। ট্যাংক দুটি লোড করতে প্রথমদিকে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগলেও পাইপের ছিদ্রের কারণে বর্তমানে প্রায় সাত ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হচ্ছে।
৭. ট্যাংক দুটি পরিকল্পনা মাফিক ব্যালেন্স করে স্থাপন করা হলে অনেক ওয়ার্ডে পানি সহজে সরবরাহ করা যেতো। এখন দুটি ট্যাংকই কাছাকাছি হওয়ায় দূরবর্তী ওয়ার্ডে পানি সহজে পৌঁছানো যায় না।
৮. এ সমস্যা সমাধান করার জন্য ১,২ ও ৫ নং ওয়ার্ডে আরও তিনটি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে এসকল ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ সহজ হবে।
৯. সবচেয়ে দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক যে বিষয়টি ঘটেছে তা হচ্ছে সূর্যমনি প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এই ৬ কিলোমিটার এমএস পাইপ এতটাই নিম্নমানের এবং দুর্বল যে স্থাপনের কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র এবং ফাটল দেখা যায়।
১০. উক্ত ছিদ্র এবং ফাটল দিয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লিটার পানি অপচয় হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ছিদ্র মেরামত এবং পাইপ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এতো বিশাল লাইন মেরামত করে শেষ করা যাচ্ছে না। অধিকন্তু পাইপে পানির ফোর্স বৃদ্ধি করতে গেলে অধিকাংশ পাইপ ফেটে গিয়ে সমস্যা আরও বৃদ্ধি করবে।
১১. উক্ত ছয় কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনে অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য পৌরসভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তসহ স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
১২. পানি না পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে কিছু মানুষ পানি ছাড়ার সাথে সাথেই মটর দিয়ে পাইপের পানি নিয়ে থাকে। পাইপের যে কোনো স্থানে মটর দিয়ে পানি নিলে পরবর্তী গ্রাহকদের পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে পারে না। অনেক গ্রাহক এভাবে লাইনে মটর বসিয়ে অন্য গ্রাহকদের বঞ্চিত করে যাচ্ছে।ইতিমধ্যে মটর ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
১৩. উল্লিখিত বাস্তবতা বিবেচনায় সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সকল গ্রাহকের নিকট পানি পৌঁছানো এই মুহূর্তে পৌরসভার পক্ষে দুরূহ।
১৪. পানির বিল অটোমেটিক মিটারে নির্ধারণ করা হয় বিধায় ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি প্রশাসকের নিকট জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।
১৫. অপ্রতুল জনবল এবং সীমিত সম্পদের মাধ্যমে পৌরসভা আপনাদের সাধ্যমতো সেবা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।
১৬. যে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে লোক পাঠিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারিগরি সমস্যা না থাকলে সমস্যাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।
১৭. এছাড়াও আপনাদের যে কোনো মূল্যবান মতামত বা পরামর্শ পৌর কর্তৃপক্ষকে সমৃদ্ধ করবে। প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের মনে করে এগিয়ে আসুন। সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করুন।
আন্তরিক ধন্যবাদান্তে
প্রশাসক, মঠবাড়ীয়া পৌরসভা।