বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে আন্দোলনে জড়িত এক যুবকের পরিচয় নিয় ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। হোসাইন আল সুহান নামে ওই যুবককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের দাবি, তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা। অন্যদিকে সুহান গত জুলাই আগষ্টজুরে সৈরাচারী সরকার পতনে রাজপথে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ করে স্বাস্থখাত সংস্কার আন্দোলনকারীরা। থানার ভেতরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে তাদের। এর আগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নগর ভবনের সামনে ফজলুল হক এভিনিউ সড়ক থেকে সুহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করে ও সড়ক আটকে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা ।
এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে কোতোয়ালী মডেল থানা ঘেরাও করে মূল ফটকে বিক্ষোভ করতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা। সুহানকে গ্রেপ্তারের খবরে রোববার দুপুর থেকে ডাকা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সোমবার দুপুর তিনটার দিকে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা কাজে ফিরেছেন। পুলিশ কমিশনার পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, সুহানকে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের উপর হামলাসহ , গত জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে।
তিনি আরও বলেন, সুহান ছাত্রলীগ নেতা তার প্রমান এই ছবিতে। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের সদস্য তাহমিদ ইসলাম দাইয়ান মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বলেন, ‘মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। তাই আমরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ আমাদের সমন্বয়ক সুহানকে নিয়ে গেছে। তার মুক্তির দাবিতে আমরা এখন থানায় অবস্থান নিয়েছি।’
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের ক্যাডার সুহান বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও পলাতক শেখ হাসিনার মামাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী। তাকে গ্রেপ্তারের সময় স্বাস্থ্যখাত আন্দোলনের কয়েকজন সদস্য জোর করে টহল পিকআপে উঠেছিল। তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুহানকে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারী মামলার আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে সোমবার বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের আহত করার অভিযোগে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাহাদুর শিকদার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনিকে একমাত্র নামধারী ও অজ্ঞাত আরও ৮০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আইন অমান্য করে জনতার উপর হামলা, হত্যা করতে আঘাতসহ মারধর-জখমসহ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মহিউদ্দিন রনি বলেন, ডিসির প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য বলেন। শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীরা সবাই একসাথে স্মারকলিপি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে যেতেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেয় এবং হোসাইন আল সুহানকে ধরে নিয়ে যায়। একজন জুলাই যোদ্ধাকে এভাবে ডেবিল ট্যাগ দিয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে না।
আমারা জানতে চাই কার র্নিদেশে গ্রেপ্তার করা হলো এবং কেন পুলিশ আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের গায় হাত দিলো। স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের এই যৌক্তিক আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য একজন জুলাই যোদ্ধাকে ডেভিল হান্ট অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন সুহান যখন ৮ম শ্রেনীতে পড়াকালে আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে অংশগ্রহন করে, সেই মিছিলের ছবি দিয়ে তাকে ফ্যাসিস্টের দোসর বানিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুরো স্বাস্থ্যকর আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি কুচক্রী মহল ও পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। বরিশালে যারা গত জুলাই আগষ্টে সরকার পতনের আন্দোলন করেছে তারা সুহানকে চেনে এবং জানে। সুহানের গায়ে ১৭ টি গুলি (স্প্রিন্টারের) আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহানের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে সরকার পতনে পুলিশের গুলি স্বৈরাচারী সরকারের নেতা কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়। আমার ছেলে আহার নিদ্রা পরিহার করে রাজপথে থেকে আন্দোলন চালিয়েছে।
আমার ছেলের বাচ্চাকালের একটা ছবি বের করে ছেলে পেলেদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভুল প্রমাণিত করতে চাচ্ছে একটি মহল, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, এরই সাথে আমার ছেলেকে জামিনে যাতে বিলম্ব না করে, সে বিষয় আদালতে দাবিগুলি পেশ করবো। প্রসঙ্গত, ২৩ দিন ধরে চলা আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের পাশাপাশি গত ১১ আগস্ট শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি গেটে আমরণ অনশনে বসেন কয়েক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে অনশন থেকে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ সময় দুই পক্ষের একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে দাবি করা হয়। গত রোববার শেবাচিম হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে আন্দোলনে নামে। একই সময় ছাত্রজনতা শেবাচিমের প্রধান গেটে অবস্থানকালে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন ছাত্রজনতার ছোড়া ইটে চিকিৎসক আহত হয় বলে অভিযোগ তোলা হয়।
এরপর রোববার দুপুর থেকে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা জানান, হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে হাসপাতাল শাটডাউনের কথা জানান। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা দূর, রোগীদের হয়রানি ও স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট নির্মুলের দাবিতে চলমান এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে সুহান একজন, যদিও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে।
মহিউদ্দিন রনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের এই যৌক্তিক আন্দোলন, দলীয় লেজুর ভিত্তিক ডাক্তারদের নিয়োগ,এবং দালাল নির্মূল এর যে দাবি ছাত্র জনতা তুলেছেন, এই দাবী সরকার যদি মেনে নেয় তাহলে একটি কুচক্রী মহল সন্ত্রাসবাদ কায়েম দালাল সিন্ডিকেট পরিচালনা স্বাস্থ্যখাতকে কেন্দ্র করে অনিয়ম দুর্নীতি করতে না। তাই আমাদের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র হচ্ছে।