More

    মামুনের মাথার খুলি রাখা ফ্রিজে, জ্ঞান ফেরেনি সায়েমের

    অবশ্যই পরুন

    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া। ক’দিন পরই শেষ হতো শিক্ষাজীবন। এরপর হয়তো প্রবেশ করতেন কর্মজীবনে। হাল ধরতেন পরিবারের। যে মামুনকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখেছিল তার পরিবার; সেই মামুন এখন আছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। রামদার কোপে তার মাথায় হয়েছে গুরুতর ক্ষত।

    এটি এতটা গভীরে গেছে যে, খুলে ফেলতে হয়েছে খুলির একাংশ। খুলির ভাঙা অংশ ফ্রিজে রেখে মাথা মোড়ানো হয়েছে সাদা ব‍্যান্ডেজে। কালো কালিতে সেখানে লেখা হয়েছে ‘হাড় নেই চাপ দেবেন না।’ মামুনের বড় বড় ভাই টাঙ্গাইলে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। নাম মাসুদ রানা। ভাইয়ের পাশে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি। বললেন, ‘মামুন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে। তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে কি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে?

    যে আশা নিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠালাম সেটা এখন ধুলিস্মাৎ হওয়ার পথে। ডাক্তার বলেছেন, সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। সুস্থ হলেও মেনে চলতে হবে অনেক বিধিনিষেধ।’ হাসপাতালের শয্যায় নিথর পড়ে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরেক ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। রোববার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘাতে তিনিও গুরুতর আহত হন।

    তার মাথায়ও পড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। চিকিৎসকরা তার মাথায় জরুরি অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর কেটে গেছে চার দিন তথা ৯৬ ঘণ্টার কাছাকাছি। এখনও চোখ মেলেনি সায়েম। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

    সায়েমের বাবা মোহাম্মদ আমির হোসেন ছেলের খবর শুনে বগুড়া থেকে ছুটে এসেছেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালের করিডোরে কাটছে রাত। চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘ছেলেকে অনেকবার নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, মারামারিতে যাস না। কিন্তু সে বলল, আহত বন্ধুদের হাসপাতালে নিতে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর শুনি আমার ছেলেকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে সন্ত্রাসীরা।

    একজন মানুষ কীভাবে আরেকজনকে এভাবে কোপাতে পারে?’ পার্কভিউ হাসপাতালের স্পেশালাইজড ইউনিটের ইনচার্জ ডা. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘ইমতিয়াজ সায়েমের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালী ছিঁড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি। শুধু ব্লাড প্রেসারে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।’

    মামুনের বিষয়ে তিনি জানান, তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খুলি ফ্রিজে রাখা হয়েছে। যদি সুস্থ থাকে, দুই থেকে আড়াই মাস পর তা পুনঃস্থাপন করা হবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’ উল্লেখ্য, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি ঘটনা থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়।

    একজন ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তার গায়ে হাত তোলেন। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন এবং তা গ্রামবাসীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ আহত হন প্রায় ৪০০ জন। এখনও তিন শিক্ষার্থী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত...