বিশেষ প্রতিনিধিঃ বরিশালের উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারই অধীনস্থ কর্মকর্তা সুমন চৌধুরীকে। এতে স্বচ্ছ তদন্ত নিয়ে স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা দপ্তরে কোনো অভিযোগ এলে প্রথমে আবেদনকারীকে নানা যুক্তিতে ভুল বুঝিয়ে ফেরত পাঠান এই কর্মকর্তা। পরে অভিযুক্তদের ডেকে নেন এবং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ‘আপস-মীমাংসা’ করে দেন। ফলে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে যাচ্ছে, আর ভেঙে পড়ছে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা।
স্থানীয় শিক্ষকরা জানান, এবিএম জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। সাতলা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের চাকরিপ্রার্থী মোহাম্মদ অলিউল ইসলাম সম্প্রতি মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে একে একে বেরিয়ে আসে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য। অভিযোগে বলা হয়, রাজাপুর নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত না থেকে টাকার বিনিময়ে কাগজে অনুমোদন দেন।
এছাড়া নতুন নিয়োগ পাওয়া এনটিআরসির সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছ থেকেও তিনি পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, “স্যার সরাসরি ঘুষ নেন না, তবে কাজ করাতে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা নেন।”
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন, যদিও সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী একটানা তিন বছরের বেশি একই জায়গায় থাকার সুযোগ নেই। শিক্ষক ও অভিভাবকরা মনে করছেন, দুর্নীতির নিরাপদ ক্ষেত্র তৈরি করতেই তিনি উজিরপুর ছাড়ছেন না।
রাজাপুর নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সরাসরি অর্থ নেওয়া হয়নি। তবে শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য যেসব খরচ হয়েছে, তা প্রার্থীকেই বহন করতে হয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল কাদের ও বিদ্যুৎসাহী সদস্য মো. ইয়াসিন বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, এবিএম জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। তবে অজ্ঞাত কারণে তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলী সুজা জানান, “বিষয়টি তদন্তাধীন।
প্রমাণ পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে এবং তারাই ব্যবস্থা নেবেন।” স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষা ও দুর্নীতির লাগাম টানতে এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।