More

    দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমা শিল্পীদের

    অবশ্যই পরুন

    অনলাইন ডেস্ক:  সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। অভিজ্ঞ হাতের জাদুতে সূক্ষ্মভাবে গড়ে তুলছেন দেব-দেবীকে। দেবী দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী-সরস্বতীসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা তৈরি করছেন তারা। মন্দিরে মন্দিরে পুরোদস্তুর চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। কয়েক দিন পরই দুর্গাপূজা শুরু।

    ফলে দম ফেলার ফুরসত নেই মৃৎশিল্পীদের। রাজধানীতে সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকার নর্থব্রুক হল রোডের শ্রী শ্রী প্রাণ বল্লভ জিঁউ মন্দির, শাঁখারিবাজার ও সূত্রাপুরের বিভিন্ন স্থানে মৃৎশিল্পীদের কেউ কেউ প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক উপকরণ এক করে খড়কুটোর মাপকাঠি করছেন, আবার কেউবা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

    তারা জানিয়েছেন, এ কাজে প্রতিদিন ১৪-১৫ ঘণ্টা করে কাটছে তাদের। প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন, আগের চেয়ে কাজ বেড়েছে, আবার খরচও বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি পারিশ্রমিক। প্রতিমা তৈরির উপকরণের দামও চড়া। উপকরণ হিসেবে এঁটেল মাটি, খড়, বাঁশ, কাঠ, সুতলি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে গত বছরের চেয়ে এবার বেশি দাম গুনতে হচ্ছে তাদের।

    পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকার ১৬ নম্বর কে. জি গুপ্ত লেনে প্রতিমা তৈরি করছিলেন কিশোর সাহা (৫৬) নামে একজন মৃৎশিল্প। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে আছি। জীবন-যৌবন সব এর মধ্যেই কেটেছে। দেবী দুর্গা, গণেশ, কার্তিক সবাইকে তৈরি করা রপ্ত করেছি।

    বাবা আর বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ছোটবেলায় এই কাজ শিখেছি। কিশোর সাহা বলেন, শুরুতে জীবিকার তাগিদে প্রতিমা তৈরি করলেও পরে ভালোবাসা আর ভালো লাগা থেকেই এ পেশায় থেকে যাওয়া। কারণ এ পেশায় যে মজুরি পাওয়া যায় তা পরিশ্রমের তুলনায় খুবই কম। এছাড়া সব সময় কাজ থাকে না। পুজোর সময় হলেই প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা বাড়ে।

    বাকি সময় প্রতিমা-শিল্পীদের তেমন কদর থাকে না। প্রতিমা তৈরিতে খরচ বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সুতলি, কাঠ, খড়, বাঁশ, মাটি সবকিছুর দাম বেড়েছে। এজন্য প্রতিমারও দাম বেড়েছে। আগে যে প্রতিমা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, খরচ বাড়ায় এখন সেটা ১৫-১৬ হাজার টাকা বিক্রি করা লাগছে। রবীন্দ্রনাথ দাস নামে আরেকজন মৃৎশিল্প বলেন, বংশপরম্পরায় আমি এই মৃৎশিল্পের কারিগর। আমার পূর্ব পুরুষরা একই কাজ করে গেছেন। অন্য কোনও কাজ আমার জানা নেই।

    ৪০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। পরিবারের জন্য তেমন কিছু করতে পারেনি। আগে যে মজুরি পেতাম তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলতো। তখন জিনিসপত্রের দাম কম ছিল। এখন দৈনিক ৬০০ টাকা করে মজুরি পাই, তবু সংসার চালাতে হিমশিম খাই। তিনি আরও বলেন, বছরের এই সময়ে আমাদের তুমুল ব্যস্ততা থাকে। বাকি সময়ে তেমন কাজ থাকে না। তখন অন্যরা অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সবকিছুর দাম এখন আকাশচুম্বী। তা ছাড়া অনেকে এখন মেশিন দিয়ে কাজ করে।

    মেশিনে তিনজন মজুরের জায়গায় দুজন লাগে। আমার মেশিন নেই। তাই কম বেতন হলেও কাজ করা লাগে। নর্থব্রুক হল রোডের শ্রী শ্রী প্রাণ বল্লভ জিঁউ মন্দিরে প্রতিমা নির্মাণ করেছিলেন আরাধন পাল (২৪)। তিনিও পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে এই পেশায় এসেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম—আমার বাবা, ঠাকুর দাদারা প্রতিমা তৈরি করে রাতদিন পার করতেন।

    তাদের কাছ থেকে আমিও শিখেছি। তারা এখন বেঁচে নেই। তাই এখন আমিই সংসারে হাল ধরেছি। প্রতিমা তৈরিতে কেমন খরচ হচ্ছে এবং আগের তুলনায় পারিশ্রমিক বেড়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে রাখাল পাল নামে আরেকজন মৃৎশিল্প বলেন, প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত এক বস্তা মাটির (৫০ কেজির) দাম দুই-আড়াই হাজার টাকা। আছে পরিবহন খরচ। আগে যে খড়ের গাদা ৪০০ টাকা ছিল, এখন তার দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

    ১৫০ টাকার সুতলির বান্ডেল ২০০-২২০ টাকা, ২০০ টাকার বাঁশ এখন পাঁচশত টাকা। তবে সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের পারিশ্রমিক কিন্তু বাড়েনি। উল্লেখ্য, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী, ২ অক্টোবর বিজয় দশমীর মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বিএনপিতে মনোনয়ন সংকট: বিক্ষোভ–অবরোধ, আটকে ৪৩ আসন

    বিএনপি ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভ করছেন বাদ পড়া নেতাদের অনুসারীরা। বাকি ৬৩ আসনের...