পটুয়াখালীর মহিপুরের মুসুল্লীয়াবাদ এ কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে দীর্ঘ ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনো আধুনিক ভবন। বর্তমানে চার শতাধিক শিক্ষার্থী ও ১৪ জন শিক্ষক জরাজীর্ণ একটি ভবন এবং টিনশেড কক্ষে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি হিসাব শাখা থেকে একতলা একটি ভবন পেলেও সেটি বর্তমানে ভেঙে খসে খসে পড়ছে। দেয়ালের প্লাস্টার ও ছাদের অংশ পড়ে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার আহত হয়েছে। ওই ভবনের একটি কক্ষে অফিস এবং অন্য কক্ষে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় থাকলেও প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের অন্যান্য শ্রেণি-পাঠ চলছে জরাজীর্ণ টিনশেড কক্ষে। ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষ ভিজে যায়, বৃষ্টির দিনে শিক্ষার্থীরা বই-খাতা বাঁচাতে হিমশিম খায়। অন্যদিকে, টয়লেটটি দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নদশায় রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কষ্টে টিকে থেকে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার মধ্যে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। এক শিক্ষার্থীর মা রাশেদা বেগম বলেন, আমরা প্রতিদিন ভয়ে থাকি, কখন যে ভবনটা ভেঙে পড়ে বাচ্চাদের গায়ে লাগে। তবুও পড়াশোনা বন্ধ রাখতে পারি না।
সরকার যদি দ্রুত নতুন ভবনের ব্যবস্থা না করে তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আরেক অভিভাবক শাহাদাত হোসেন বলেন, বাচ্চাদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে পাঠাতে আমাদের কষ্ট হয়। সরকারের কাছে জোর দাবি, দ্রুত এই বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন বরাদ্দ দেওয়া হোক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফকরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ভগ্নপ্রায় ভবনের নিচে বসে অফিস করতে হয়।
শিক্ষার্থীরা যখন ক্লাস করে, তখনও আমরা আতঙ্কে থাকি। ঝড়বৃষ্টি হলেই শিক্ষাদান বন্ধ রাখতে হয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। তবে এভাবে আর কতদিন? অনতিবিলম্বে একটি নতুন ভবন অত্যন্ত জরুরি। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. রাসেল আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবনের আবেদন একাধিকবার করা হলেও এখনো কোনো বরাদ্দ আসেনি। শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি, কিন্তু কোনো সুফল পাইনি।
আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। না হলে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। বিদ্যালয়ের সাফল্যের দিকও উপেক্ষা করা যায় না। এ প্রতিষ্ঠানের চার শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিকূল পরিবেশেও ভালো ফলাফল করছে। এই বছরের এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডের সার্বিক ফল খারাপ হলেও কুয়াকাটা পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে মুসুল্লীয়াবাদ এ কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
কলাপাড়া উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত আছি। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টির জন্য দুইটি ভবন ও ৯৬ জোড়া বেঞ্চের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।