পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলায় ফসলি জমিতে অতিরিক্ত পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। এ অঞ্চলের নদী, খাল ও পুকুরের পানিতে বিষাক্ত পদার্থের সংমিশ্রণে পরিবেশের ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে মাছের আবাসস্থল ও প্রজননের ওপর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা জমিতে ফলন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। বর্ষার পানির সঙ্গে এসব পদার্থ নদী, খাল ও পুকুরে মিশে গিয়ে মাছের প্রজনন ও জীবনচক্র ব্যাহত করছে। ফলে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় প্রচলিত দেশীয় মাছ যেমন— পুঁটি, কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, টাকি, চিংরি, বাইম, বেদা, গজার, বেলে মাছসহ অন্যান্য প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। খবর বাসসের। রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মৎস্যজীবী আবদুল করিম (৫০) বলেন, একসময় খাল-বিল-নালায় প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত।
এখন আর সেই মাছ দেখা যায় না, প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাউফলের কনকদিয়া ইউনিয়নের মৎস্যজীবী কেরামত আলী (৫৫) বলেন, আগে জাল মারলেই জালে মাছ ভরে উঠত। আজ আর সেই দৃশ্য নেই। দেশীয় মাছ রক্ষার পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এগুলো সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে। সচেতন মহলের উদ্যোগে এখনই কাজ করা প্রয়োজন। স্থানীয়রা জানান, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও বাউফল দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় মাছের জন্য পরিচিত। এই মাছের সঙ্গে স্থানীয়দের জীবিকা, খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি জড়িত। তাই পরিবেশ রক্ষা ও দেশীয় মাছের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। বাউফল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রা দেশীয় মাছের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মাছ রক্ষায় সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ, জলাশয় সংরক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি না করলে এই মাছ অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে। রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ফসলি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার দেশের দেশীয় মাছের বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর মাছ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ফসলি জমিতে রাসায়নিক ব্যবহারে মাছের ক্ষতি হচ্ছে।
আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের গাছের ডাল পুতে দেওয়া, রাতে আলোক ফাঁদ তৈরি করা, নীমপাতা ও মেহগনি ফল ব্যবহার করে কীটনাশক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি। বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিলন বলেন, জৈব সার ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের পরিমাণ কমানো সম্ভব। একইসাথে ফসলের উৎপাদনও বজায় রাখা যায়। তবে কৃষকদের ধীরে ধীরে জৈব পদ্ধতির দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশীয় মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক, জলাশয়ের সংকট, মৎস্য অভয়াশ্রমের অভাব, মৎস্য আবাস ভূমির চ্যানেল বন্ধ থাকা ও অবৈধ জাল ব্যবহার অন্যতম কারণ। আমরা কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিলুপ্ত মাছ পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি।