ঠিক এক সপ্তাহ আগের কথা ভাবুন। শ্রীলঙ্কার কাছে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ দল তখন কোণঠাসা। সুপার ফোরের আগেই বিদায়ের শঙ্কা তখন প্রবল। বাংলাদেশ না থাকলে কভারেজের পড়তি চিন্তা করে দেশে ফেরার পরিকল্পনাও করছিলেন কিছু গণমাধ্যম কর্মী। অনেক রঙ বদল, সমীকরণ, দোলাচল পেরিয়ে দিন সাতেক পর গোটা চেহারা এখন ভিন্ন।
এখন ২৮ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের ফাইনাল মঞ্চে একটা দলের নাম বাংলাদেশ হতেই পারে। শঙ্কার মেঘে কপালের ভাঁজে উদ্বিগ্ন ক্রিকেটাররা এখন মনখোলা হাসিতে ফুরফুরে। দলের এক ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘ভাই, আমাদের এখন হারানোর কিছু নেই। কেবল পাওয়ার আছে।’ দলের ভেতর নাকি এই বিশ্বাসই টনিকের মতন কাজ করছে। এই আবহ তৈরি হয় শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানকে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হারিয়ে দেওয়ার পর। অর্থাৎ খাদের কিনার থেকে সুপার ফোর নিশ্চিতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আনন্দ পুরো দলের শরীরী ভাষা বদলে দিয়েছে।
এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে, একাধিক ক্রিকেটার বলে গেছেন তারা ফাইনাল খেলতে চান। কেউ কেউ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথাও বলেছেন। সেসব যে স্রেফ কথার কথা নয় তা প্রমাণের দায় ছিলো তাদের। গ্রুপ পর্বের একটা পর্যায়ে মানুষে ভিত নড়ে গিয়েছিলো। আশার বেলুন হয়ে যাচ্ছিলো ফুটো। এমনিতে ভারত ছাড়া এশিয়া কাপের টেস্ট খেলুড়ে বাকি চারদলই শক্তিতে অনেকটা কাছাকাছি। ফাইনাল খেলার আশা বাংলাদেশের বাড়াবাড়ি ছিলো না। কঠিন গ্রুপে পড়ায় সুপার ফোর নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিলই।
এমন না যে কেবল শ্রীলঙ্কার কাঁধে চড়েই শেষ চারে উঠেছে বাংলাদেশ। লিটন দাসরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ কাজটা সুচারুভাবে করতে পেরেছিলেন, দারুণ লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে হারাতে পেরেছিলেন। যেই আফগানদের মনে করা হচ্ছিলো ফাইনালে উঠার মতন দল, তাদের গ্রুপ পর্বেই থামিয়ে এগিয়ে আসতে পেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর রোববার সারাদিনে টিম হোটেলেই বিশ্রামে ছিলেন ক্রিকেটাররা। আমিরাতের গরমে খেলার ধকল সইতে রিকোভারির ব্যাপারটাকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
আপাতত টানা দুদিন পুরোপুরি বিশ্রামের সুযোগ আছে। মঙ্গলবার তাদের পুরো দমে প্রস্তুতি নিতে হবে পর পর দুদিন দুই ম্যাচের জন্য। যেখানে প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশ দলকে ইতিবাচক ভাইব দিচ্ছে ঠিক সময়ে দলের মূল খেলোয়াড়দের জ্বলে উঠা। এশিয়া কাপের বেশ আগে থেকেই ধুঁকছিলেন তাওহিদ হৃদয়। কখনো রান করলেও এমন গতিতে সংগ্রাম করে এগুচ্ছিলেন যা দলের জন্য ছিলো আরো বোঝার মতন। তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠে প্রবলভাবে। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট হৃদয়ের উপর ভরসা রেখে গেছে।
গ্রুপের তিন ম্যাচে ব্যর্থ হলেও তাকে সুপার ফোরে খেলিয়েছে। রানে নেই, ফিল্ডিংয়ে নেমে দুই ক্যাচ হাতছাড়া করে নিজের উপর চাপটা প্রবল বাড়িয়ে ফেলেছিলেন হৃদয়। তার সামনে ছিলো সম্ভবত এই আসরে শেষ সুযোগ। একদম কোণঠাসা অবস্থায়, দলের ভীষণ চাহিদায় জ্বলে উঠেন তিনি। ৩৭ বল ৫৮ রানের ইনিংসটাতে হৃদয় যতটা খুশি, টিম ম্যানেজমেন্টের স্বস্তি হয়ত তারচেয়ে বেশি। না হলে মিডল অর্ডারের ঘাটতি নিয়ে ঘুম হারাম অবস্থা হতো তাদের। হৃদয় যেমন ফিরে আসার গল্প লিখেছেন, মোস্তাফিজ দেখাচ্ছেন এই দলে তিনিই সবচেয়ে বড় টি-টোয়েন্টি তারকা।
এক ম্যাচ বাদ দিলে গোটা আসরে নীরবে নিজের কাজ করে গেছেন কাটার মাস্টার। সুপার ফোরে যে মানের বল করেছেন তাতে যেকোনো দলের জন্যই তাকে সামলানো হতো কঠিন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেট বছরের এই সময়টায় ঠিক ফ্ল্যাট নয়, খেলাও হচ্ছে ব্যবহৃত সব উইকেটে। এরকম উইকেট বানিয়েই বাংলাদেশ দলের জন্য আদর্শ ম্যাচ-আপ। বল ধরে আসা উইকেটে মোস্তাফিজ যেমন বিপদজনক, স্পিনাররাও নিজেদের মেলে ধরতে পারেন ভালো।
আর মাঝারি রানের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশের ব্যাটাররাও নাগাল বুঝে এগুতে পারেন বিশ্বাস নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ছন্দে থাকা, টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় জীবন পেয়ে হারানোর ভয় তাড়িয়ে দেওয়া, কন্ডিশনের ম্যাচ-আপ বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ঘরের মাঠে গত অগাস্টেই পাকিস্তানকে সিরিজ হারিয়েছিলেন তারা। শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা ভারতকে হারানো কঠিন হলেও পাকিস্তান তো নাগালের মাঝেই।
দুই ম্যাচের আর একটা জিতলেই তো খুলে যেতে পারে ২৮ তারিখে ফাইনালের দ্বার। আর দুই ম্যাচ জিততে পারলে তো কথাই নেই। ২০১৮ সালে ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপে দুবাইতে ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ, এবারও ফাইনালের তারিখটা ২৮। সেবারও সুপার ফোরে শেষ ম্যাচটা ছিলো পাকিস্তানের বিপক্ষে, এবারও তাই। বাকি সব মিলে গেলেই হলো।