বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ডিসি লেকের এক পাশে প্লাকার্ড হাতে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ, অন্য পাশে সে প্রতিবাদ উপেক্ষা করে লেকের প্রাচীর নির্মাণে কংক্রিটের উপাদান মেশাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। এটা ছিল গত শুক্রবারের দৃশ্য। এ নিয়ে কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ডিসি লেকের প্রাচীর নির্মাণের প্রতিবাদে অর্থাৎ লেক উন্মুক্ত রাখার দাবি কর্মসূচি এখনো চলছে।
তবে প্রাচীর নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে সিটি করপোরেশন। এদিকে, লেকের তীরে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির পর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে আজ। গত শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনে মানববন্ধনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা দাবি তোলেন, ‘ডিসি লেককে বন্দি নয়, উন্মুক্ত রাখা হোক’।
কিন্তু সমালোচনার মধ্যেও কাজ বন্ধ রাখা হয়নি। আজ রবিবার সকালে লেকের একপাশে ট্রাকে করে বালু ফেলা হয়, পাশাপাশি শ্রমিকরা দেয়াল নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। আর অন্য পাশে ‘সর্বস্তরের নাগরিক’-এর ব্যানারে চলছে ধারাবাহিক প্রতিবাদ। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘ডিসি লেক শুধু একটি জলাশয় নয়, বরিশালের মানুষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মুক্ত নিঃশ্বাসের প্রতীক।’ কবি হেনরী স্বপন বলেন, ‘শহরের এই লেক হচ্ছে নাগরিকদের হারানো শ্বাসের ফুসফুস।
প্রাচীর দিয়ে এটিকে ঘিরে রাখার অর্থ শহরবাসীকে কংক্রিটের খাঁচায় আটকে দেওয়া।’ বক্তাদের মতে, ‘অসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধের নামে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করার যৌক্তিকতা নেই। আলো, নিরাপত্তা ও টহল বাড়িয়ে সমস্যা সমাধান সম্ভব, কিন্তু দেওয়াল তুলে নয়।’ তাঁরা বলেন, বরিশালের ফুসফুস খাঁচায় বন্দি হচ্ছে। ইতিমধ্যে লেকের চারপাশে লোহার কাঠামো বসানো ও কংক্রিট ঢালাইয়ের শুরু হয়েছে। এতে দূর থেকে লেক দেখা গেলেও কাছে গিয়ে আর উপভোগ করা যাবে না।
বক্তারা অবিলম্বে প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানান, অন্যথায় বরিশালবাসী আন্দোলনের মাধ্যমে এর জবাব দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তঁরা। পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এটি কেবল উন্নয়ন প্রকল্প নয়, বরং নাগরিক সংস্কৃতির ওপর এক ধরনের হস্তক্ষেপ। জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি লেকের ধারে ছিনতাই ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থেই সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে।’তিনি বলেন, পিলারের ফাঁকে গ্রিল বসানো হবে। ওপরে আলো থাকবে। এতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তাঁর ভাষায়, ‘যারা আন্দোলন করছেন, তারা না বুঝেই করছেন।’