দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর সুরক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ অঞ্চলের পরিবেশ-প্রকৃতি মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। ইতিমধ্যে নদ–নদীর চর-ডুবোচরের কারণে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে ইলিশের বিচরণ ও প্রজনন হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি নদ–নদীর বিভিন্ন স্থানে দখল-দূষণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
এসব কারণে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ চ্যানেল; বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদে ইলিশের প্রজনন ও বিচরণ হুমকিতে পড়েছে। এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এসব নদ–নদী অস্তিত্বসংকটে পড়বে। বরিশালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক নেটওয়ার্কিং মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের সদর রোডের বিডিএস মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় বিভাগের ছয় জেলার পরিবেশকর্মী ও সংগঠকেরা অংশ নেন।
সভায় বেলার মাঠ সমন্বয়ক এ এম এম মামুন সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং বিভাগের বিভিন্ন নদ–নদী ও পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন। সভায় বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক লিঙ্কন বায়েন বলেন, ইতিমধ্যে বরিশাল বিভাগের বেশ কয়েকটি নদ–নদী ও খালের দখলদার উচ্ছেদে আদালতে মামলা করা হয়েছে। কিছু মামলার রায়ও এসেছে। এখন রায় বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বিভাগীয় সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, কীর্তনখোলা নদীর দুই পাড়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। তিন বছর আগে উচ্চ আদালতে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আড়াই শ দখলদার উচ্ছেদে রায় হয়েছিল। কিন্তু সেই রায় এখনো কার্যকর হয়নি। সেই রায় বাস্তবায়নের পাশাপাশি সাড়ে চার হাজার দখলদার উচ্ছেদে প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ভোলার পরিবেশকর্মী মো. বাহাউদ্দীন বলেন, দখলের কারণে ভোলা খাল এখন মৃতপ্রায়। ভোলার ভেদুরিয়া-সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীর তীরে একটি বড় শিল্পগ্রুপ নদীর শিকস্তি জমি কিনছে। মেঘনা নদীর তীরে আরেকটি বস্ত্রকল স্থাপন করা হচ্ছে। সেখান বর্জ্য নিঃসরণের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসব বর্জ্য মেঘনায় মিশে দূষণের মাত্রা আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পরিবেশকর্মী সাইমুন রহমান বলেন, কলাপাড়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা বহনকারী লাইটার জাহাজগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় কয়লা পরিবহন রাবনাবাদ চ্যানেলে দূষণ ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ নদীকে ক্রমাগত বিষাক্ত করে তুলছে। এতে ইলিশের প্রজনন ও বিচরণ মারাত্মকভাবে হুমকিতে পড়েছে। এ অবস্থা নিরসনে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
বরগুনার পরিবেশকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, দক্ষিণের দীর্ঘ ও সবচেয়ে বড় তিন নদ–নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বরের মোহনায় বিশাল চর পড়ে তিনটি নদীরই নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। সেখানে বড় ধরনের খনন কার্যক্রম না চালালে অচিরেই তিন নদীর অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে।
পাশাপাশি বিষখালী নদীর বরগুনার বাইনচটকি এলাকার মোহনায় একটি ইটভাটার মালিক নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি তিনি নদীর মধ্যে জাল দিয়ে ঘিরে মাছের ঘের করেছেন। অবিলম্বে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ না করলে বিষখালী নদীর ওই অংশ হুমকিতে পড়বে। সভায় বেলার মাঠ সমন্বয়ক এ এম এম মামুন বলেন, আগামী এক বছরের কর্মপরিকল্পনায় এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে সমস্যা সমাধানে বেলা সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
সভায় বরিশালের উন্নয়ন সংগঠক শুভঙ্কর চক্রবর্তী, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন খন্দকার, ভোলার নাগরিক আন্দোলনের নেতা মোবাশ্বের উল্লাহ, প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।