রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: বরিশালের বানারীপাড়ায় উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ (৫৫) হত্যা মামলায় মসজিদের ইমামসহ তিন জামায়াত নেতাকে আসামী করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকালে উপজেলা ও পৌর জামায়াতের উদ্যোগে বানারীপাড়া বন্দরবাজার ফেরিঘাট সংলগ্ন বেরিবাঁধ সড়ক থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডাকবাংলো মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বানারীপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক খলিলুর রহমান শাহাদাতের সভাপতিত্বে ও পৌর জামায়াতের আমির কাওছার হোসেনের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিলোত্তর এ প্রঅতিবাদ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ ( বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাষ্টার আব্দুল মান্নান, জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সদস্য ও আইবিডব্লিউএফ বরিশাল জেলা সভাপতি মোঃ আজম খান, বানারীপাড়া উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা শিহাবউদ্দিন, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা মোকাম্মেল হোসেন মোজাম্মেল, মজলিসে মুফাসসিরিনের সভাপতি মাওলানা আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশে জেলা নায়েবে আমির মাস্টার আব্দুল মান্নান বলেন, “এই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা যদি প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি মাওলানা শিহাব উদ্দিন বলেন, “সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শামিল হতে হবে। উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক খলিলুর রহমান শাহাদাত তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক সংগঠন। অন্যায়ের কাছে আমরা মাথা নত করব না। যারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন, তারা যেন মনে রাখেন—ঘুমন্ত বাঘকে জাগ্রত করবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে
আসরের নামাজের পরে উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের করফাকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে স্থানীয় বিএনপি কর্মী দেলোয়ার হোসেন ঘরামীর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফের। একপর্যায়ে দেলোয়ার হোসেন ঘরামী কয়েকটি চর-থাপ্পর মারেন আবদুল লতিফকে। এতে আবদুল লতিফ আহত হলে তাকে উদ্ধার করে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার শুরু থেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আল মামুন, ইসমাইল চৌকিদার, হিরু হাওলাদার ও মনির সহ আরো অনেকে। অথচ দায়েরকৃত মামলাটিতে প্রকৃত প্রত্যক্ষদর্শী এসব ব্যক্তিদেরকে স্বাক্ষী রাখা হয়নি। সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোহাম্মদ ফেরদাউস, নায়েবে আমির হাফেজ নাজিমউদ্দিন ও যুব জামায়াতের নেতা এবং করফাকর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এ ঘটনায় অসংখ্য নির্দোষ পুরুষ এখন বাড়িছাড়া ।অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন ঘরামী একজন বিএনপি কর্মী। তাকে এখন জামায়াত সাজিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে বলে জামায়াত নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের দাবি।
গত ৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির করফাকর ওয়ার্ডে নির্বাচনী সেন্টার কমিটি গঠন অনুষ্ঠানে বিএনপি কর্মী দেলোয়ার হোসেন ঘরামীর ছিল সরব উপস্থিতি। বিএনপির সেই মিটিংয়ে বিএনপি কর্মী দেলোয়ার হোসেন ঘরামী ও ইউনিয়ন কৃষকদল নেতা আব্দুল লতিফ পাশাপাশি চেয়ারে বসা ছিলেন। সেই ছবি এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।২৮ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী পারভীনা বেগম বাদী হয়ে তিন জামায়াত নেতাসহ ৯ জনকে সুনির্দিষ্ট ও বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২৯ সেপ্টেম্বর ভোরে মামলার এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামী তুহিনকে ভোলা থেকে র ্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এদিকে মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রী পারভীনা বেগম জানান, আমি মামলার এজাহারে তিনজন আসামীর নাম দিয়েছি। এই তিনজনের মধ্যে জামায়াতের কারো নাম ছিলো না, অন্যান্য নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতারা বলতে পারবেন। আমি ন্যায় বিচার চাই।