বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে কিছুদিন আগেও এতটা উজ্জ্বল দেখায়নি। বিশ্বকাপে উন্নীত হতে বাছাই টুর্নামেন্ট খেলতে হয়েছে তাদের। সেখানেও সুতার ওপর ঝুলছিল তাদের বিশ্বকাপ খেলার ভাগ্য। ভাগ্যের সেই শিকে ছেঁড়ার পর লড়াকু একটি দল হয়ে ওঠার চেষ্টা ছিল নিগার সুলতানা জ্যোতিদের। সেই মানসিকতা নিয়েই বিশ্বকাপ খেলছেন তারা। টানা দুটি ম্যাচে ভালো ক্রিকেট খেলেছেন মেয়েরা।
শ্রীলঙ্কার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ শুরুই করেছেন জয় দিয়ে। ইংলিশদের বিপক্ষেও ছিলেন জয়ের মানসিকতায়। এই ভালো খেলার পেছনে রয়েছে ইতিবাচক মানসিকতা। প্রধান কোচ সারোয়ার ইমরান জানান, একাগ্রতাই ভালো খেলতে উজ্জীবিত করছে ক্রিকেটারদের। খেলোয়াড়দের মানসিকতা ও ফিটনেসে বড় পরিবর্তন হওয়ায় মাঠে ইতিবাচক পারফরম্যান্স করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। লেগস্পিনার ফাহিমা খাতুনও মানসিকতায় পরিবর্তনকে উন্নতির কারণ হিসেবে দেখেন।
বিশ্বকাপের আগের ক্যাম্পগুলো ভালো ছিল বলে মনে করে নারী দলের ম্যানেজমেন্ট। অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলে দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলায় ‘টাফনেস’ তৈরি হয়েছে বলে দাবি কোচ সারোয়ার ইমরানের। সিলেট, বিকেএসপি ও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন ও প্র্যাকটিস ম্যাচগুলো খেলেছেন জ্যোতিরা। এই কন্ডিশনের পরিবর্তন বিশ্বকাপের ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে মানিয়ে নিতে সহায়ক হয়েছে বলে দাবি অধিনায়কের। ক্রিকেট স্কিলের বাইরে যে জিনিসটা নারী দলকে ভালো খেলতে সহায়তা করছে, সেটি একতা। নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া ফাহিমাদের।
দেশের নারী ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপন বলেন, ‘এই দলের মধ্যে বিভাজন নেই। সবাই মিলে একটি দল হয়ে উঠেছে। খেলা, সুইমিং, জিম, খাওয়া, আড্ডা– সব একসঙ্গে হয়। আমার কাছে মনে হয়, এই জিনিসটা সবাইকে দল হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এই বিশ্বকাপের প্রথম দিন থেকে ভালো খেলার এবং চ্যালেঞ্জ নেওয়ার একটা মানসিকতা দেখতে পাচ্ছি মেয়েদের মধ্যে। এটি ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপে ভালো কিছু হবে।’
জ্যোতিরা দেশ ছাড়ার আগে অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে চান। বাকি দলগুলোকেও বড় করে দেখতে চান না। তারা বিশ্বকাপ শুরুই করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। পেসার মারুফা আক্তারের পেশীতে টান না লাগলে বোলিং ইউনিট দিয়ে ম্যাচটি জিতেও যেতে পারত।
প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বোলিং খুবই ভালো। বিশেষ করে স্পিন বিভাগ বিশ্বের যে কোনো দলের চেয়ে শক্তিশালী। একাধিক লেগস্পিনার আছে। বাঁহাতি, ডানহাতি স্পিনার আছে। পেস বোলিংয়ে মারুফা তার সেরা খেলাটা খেলছে। এই বোলিং ইউনিট যেদিন ক্লিক করবে, সেদিন বিশ্বের যে কোনো দলকে হারাতে পারবে বাংলাদেশের মেয়েরা।’
প্রধান কোচ সারোয়ার ইমরান ক্রিকেটের বেসিকে থেকে খেলার পক্ষে। সোবহানা মুস্তারিদের সেভাবেই প্রস্তুত করেছেন তিনি। ‘ওদের মধ্যে জেতার ক্ষুধাটা আছে। কেউ কারও দোষ খোঁজে না। শতভাগ দিয়ে নিজেদের কাজটা করে মেয়েরা, যেটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে সহায়ক ছিল। তিন মাসের মধ্যে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে তারা।’
এই বিশ্বকাপে এখনও পাঁচটি ম্যাচ বাকি জ্যোতিদের। কালই তারা মোকাবিলা করবে নিউজিল্যান্ডের। কোচিং স্টাফের সদস্য সাজ্জাদ আহমেদ মনে করেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেরাটা খেলা সম্ভব হলে গৌহাটিতে ম্যাচ জেতা সম্ভব। পেসার মারুফা আক্তার ম্যাচ খেলার মতো ফিট আছেন বলে জানায় টিম ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা গতকাল বুধবার বিশ্রামে ছিলেন। গৌহাটির স্পোর্টস শপে কিছুটা সময় কাটান তারা। একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করে চাঙ্গা হয়েছেন সবাই। সেখানে নিউজিল্যান্ড বিকেলে অনুশীলন করেছে ম্যাচ ভেন্যুতে।