পিরোজপুর জেলার কাউখালীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরে থাকছেন না ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা। ঘরগুলো জড়াজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘরে লোক না থাকায় অনেক ঘরের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয়া হয়েছে। ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সনে বিগত সরকার যাদের ঘর নেই, জমি নেই তাদের জন্য ২ শতক জমি ও আধাপাকা ২ কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দেয়া হয়।
দরিদ্র, নদী ভাঙন, ছিন্নমুলসহ অসহায়দের জন্য কয়েক দফায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সুবিধাভোগীদের দলিল হস্তান্তর, বিদ্যুতের সংযোগসহ বেশকিছু সুবিধা দিয়ে দারিদ্রতা বাছাই করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর ও জমি প্রদান করা হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শহরমুখী হয়ে গেছে অধিকাংশ পরিবার। ছোট বিড়ালজুরী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাস করা রাশিদা আক্তার, কোহিনুর বেগমসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখানে কাজের কোন সংস্থান না থাকায় শহরে যেতে হয় কাজের তাগিদে।
জীবিকার জন্য শহরেই কাজে যেতে হচ্ছে তাদেরকে। আর এখান থেকে শহরে আসা যাওয়া করতে ৫০-১০০ টাকা খরচ হয়। এতে করে দিনমজুরের বেতনে একটি বড় অংশ যাতায়াতে চলে যাওয়ায় নিরুৎসাহী হয়ে এখান থেকে অনেকেই কাজের সন্ধানে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। অনেকে মাঝে মাঝে এসে দুই একদিন থেকে চলে যায়, আবার অনেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে জীবিকার তাগিদে চলে গেছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে যারা আছেন, তাদের অবস্থা আরো দুর্বিষহ। অভ্যন্তরীণ কোন রাস্তাঘাট না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় চলাচলের পথ। আবার জোয়ার ও বন্যায় পানির আতংকে থাকতে হয় তাদেরকে। সব মিলিয়েই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন পরিবারের অভাবে খা খা করছে। আবার অনেক জায়গায় এ ফাঁকা ঘরগুলো মাদকসেবীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ৪ মেয়াদে ৬০৫টি ঘর নির্মাণ করে বসবাসের জন্য হস্তান্তর করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২শতাংশ জায়গা দেয়ার সময় সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছিলেন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ব্যবস্থা, বিনোদন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নাগরিক সকল সুবিধা দিয়ে সমাজের অন্যান্য মানুষের মতো আমাদেরও একই সামাজিক মর্যাদা দেয়া হবে। অথচ আমাদের এখানে রাস্তা, শিক্ষা, বিনোদন এর কোন ব্যবস্থা নাই।
এমনকি ন্যুনতম মানবিক অধিকারটুকুও আমরা পাচ্ছি না। সব মিলিয়ে বিগত সরকারের সময় এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘরগুলোও এখন শুধু দৃশ্যমান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বজল মোল্লা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে ঘরগুলো ফাঁকা রয়েছে, সেখানে অন্য পরিবার দেয়া হবে। এছাড়া বরাদ্দ পেলে অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটগুলো নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নাগরিক সুবিধা দেয়ার জন্য অবহিত করা হয়েছে।