More

    জীবন সংগ্রামী নারী মুকুলী বেগমের ভিক্ষায় চলে ৭ সদস্যের সংসার, ঝুপড়ির ঘরে মানবেতর জীবন যাপন

    অবশ্যই পরুন

    বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের   দরিদ্র নারী মুকুলী বেগম নিজের জীবনের সব কষ্ট ভুলে পরিবারটিকে টিকিয়ে রেখেছেন ভিক্ষার ওপর নির্ভর করে। সাত সদস্যের এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিই।

    এক মাস বয়সের শিশু সন্তানকে কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন ভোরে তিনি বের হন ভিক্ষার ঝুলি হাতে, ফিরেন সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে। তবুও মুখে থাকে অদম্য হাসি, কারণ তাঁর ভিক্ষার টাকাতেই চলছে সাতজনের জীবনযুদ্ধ।

    পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন ওই নারী ও তাঁর পরিবার। স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ, চিকিৎসার অভাবে শয্যাশায়ী। সন্তানদের কারও পড়াশোনা করার সুযোগ নেই অভাবের তাড়নায়। দিনের খাবার জুটলে রাতের চিন্তা, আবার রাতের পর সকালে কী খাবেন সেই অনিশ্চয়তা তাদের নিত্যসঙ্গী।

    মুকুলী বেগমের প্রথম বিবাহ হয়েছিল ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার খোকন নামের এক হকার ব্যবসায়ির সাথে। সেখানে তার দুই সন্তানের জন্ম হয়।

    স্বামী স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করলে দুই কন্যা সন্তান সুমাইয়া ও হালিমাকে নিয়ে তখন অসহায় হয়ে পরেন মুকুল বেগম। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের ভ্যানগাড়ি চালক আলমগীর হোসেন এর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে আবদ্ধ হয়।

    সুখের ঘরে দুখের আগুন ভুলে নতুন করে বাঁচতে সংসার শুরু করলেও সুখ জোটেনি মুকুলী বেগমের কপালে। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয় মুকুলী বেগমের।

    স্বামী আলমগীর হোসেন ভ্যানগাড়ি চালাতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে কর্মহীন হয়ে পরেছেন। এখন ৭ জনের এই সংসারের হাল ধরেছেন সংগ্রামী এই নারী মুকুলী বেগম।

    মানবতার এই কঠিন বাস্তবতায় সমাজের বিত্তবান ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী অসহায় এই নারী ও তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

    সরেজমিনে দেখা যায়, ভিক্ষুক মুকুলী বেগমের ৭ সদস্যের পরিবারটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। ঘরের উপরে নেই টিনের চালা। ঝড়-বৃষ্টিতে ছিড়ে গিয়ে পলিথিনের চালার ফাক দিয়ে আকাশ দেখা যায়।

    খরকুটার তৈরি ঘরে বৃষ্টিতে পানি ঢুকে পরে ঘরের ভিতরে। অসহায় পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কোন বিত্তশালী মানুষ। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য হলেও পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের অসাহায় পরিবারটির বেলায় কথাটি সম্পূর্ণ বিপরীত। পরিবারটির কাছে এসে দেখা যায় জীবন দুর্দশার করুন চিত্র।

    কথা হয় মুকুলী বেগমের স্বামী আলমগীর হোসেনের সাথে তিনি জানান, দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারনে কাজে যেতে পারছি না। সড়ক দুর্ঘটনায় আমার মেরুদণ্ডে সমস্যা হয়। গ্রাম থেকে মাঝে মধ্যে শাকসবজি নিয়ে বাজারে বিক্রি করতাম।

    শারীরিক অসুস্থতা ও অর্থের অভাবে তাও এখন করতে পারতেছি না। স্ত্রীর ভিক্ষায় আমাদের সংসার চলে। খেয়ে না খেয়ে অসুখে – বিসুখে মানবেতর দিন কাটছে আমাদের পরিবারের। অর্থের অভাবে পারিনি মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে।

    গোয়ার ঘরের মত একটি ঝুপড়ি ঘরে ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে শেষ বয়সে মানবেতর জীবন যাপন করতেছি পরিবার নিয়ে। সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত আমরা।

    দারিদ্র্যের কাছে হার না মানা এই নারীর সংগ্রাম আজও নিঃশব্দে বলে যায় জীবন যত কঠিনই হোক, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধের বন্ধনই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি।

    এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ বলেন, অসহায় মুকুলী বেগমের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    পিরোজপুরে জুলাই সনদ,পিআরসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের স্মারকলিপি প্রদান

    পিরোজপুর প্রতিনিধি: পিরোজপুর জুলাই সনদ,পিআরসহ ৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা...