স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পটুয়াখালীর চারটি আসনের মধ্যে দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে ১১২,পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে প্রার্থী ঘোষণা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এই আসনেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর।
গত সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী—পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন।
তবে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) ও পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের প্রার্থী ঘোষণা আপাতত ‘হোল্ড’ করে রেখেছে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই আসনে শরিক দল ও প্রভাবশালী প্রার্থীদের উপস্থিতি, পাশাপাশি একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্থগিত দুই আসনের মধ্যে—পটুয়াখালী-২ আসনে রয়েছেন এনসিপি প্রার্থী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও জামায়াতে ইসলামী নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
আর পটুয়াখালী-৩ আসনে ইতিমধ্যে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর। এছাড়া এই আসনে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মুহম্মদ শাহ আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি আবু বকর সিদ্দিক, সাবেক এমপি শাহজাহান খানের পুত্র শিপলু খান, এবং সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি।
ফলে আসনটি নিয়ে এখন তীব্র রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নূরের এলাকায় বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণা না দেওয়াকে একটি ‘কৌশলগত পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
দলটি জোট ও আসন সমন্বয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরবর্তীতে বাকি আসনগুলোর প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
গণঅধিকার পরিষদ যদি বিএনপি জোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়, তবে এই আসনটি নূরের জন্য ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।
বিএনপি নেতা হাসান মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ধৈর্য্যধারণ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই আহ্বান জানিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী শিপলু খান।
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদ বা নূরুল হক নূর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘গণঅধিকার পরিষদ – জিওপি নির্বাচনী জোটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে স্থিতিশীল রাজনীতি ও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আগামীতে নির্বাচনী জোট করলেও গণঅধিকার পরিষদ -জিওপি এর প্রার্থীরা নিজ দলের মার্কা “ট্রাক” নিয়ে নির্বাচন করবেন।’
দলটি এখন পর্যন্ত ৩০০ আসনে দলীয় ‘ট্রাক’ প্রতীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ অক্টোবর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের নূরুল হক নূরকে সাংগঠনিক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশনার পর থেকেই স্থানীয় বিএনপি মহলে জোট প্রার্থী নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
কয়েক মাস আগেও ভিপি নূর ও হাসান মামুন সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছিল।
স্থানীয়দের ভাষায়, “এই আসনে বিএনপি যদি গণঅধিকার পরিষদকে ছাড় দেয়, তাহলে পুরো নির্বাচনের সমীকরণই বদলে যেতে পারে।”
