দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শনিবার (৮ নভেম্বর) থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করবে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। নবীন শিক্ষকরাও এতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সহকারী শিক্ষকদের ৩ দফা দাবি হলো- ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের এই আন্দোলনে আছে- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদসহ অনেকগুলো প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন।
শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, শনিবার শহীদ মিনারে ২০ হাজার শিক্ষক দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার আদায়ে অবস্থান নেবেন, যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কর্মকর্তারা আলোচনা করতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন দিক বোঝাচ্ছেন; কিন্তু আমরা চাই না। আমাদের কথা তো বহুবার তাদের বলেছি, কাজ তো হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় করে আমরা ফিরবো।
খায়রুন নাহার লিপি বলেন, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৪ এপ্রিল এক আদেশে ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার কথা জানায়। তবে তাতে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পান। নার্সরা এইচএসসি ও নার্সিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পাচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এসএসসি ও কৃষি ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পাচ্ছেন। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকরাও স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পান।
তিনি আরও বলেন, আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি এবং সিএনএড বিপিএড বা বিটিপিটি কোর্স করে ১৩তম গ্রেড পান। পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও দশম গ্রেডে বেতন পান। তাই আমরা দশম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করছি।
এ বিষয়ে নবীন শিক্ষকদের নেতা তালুকদার পিয়াস বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার মূলভিত্তি প্রাথমিক স্তর। প্রাথমিক শিক্ষকরা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক গঠনের প্রথম স্তরে কাজ করেন।
তিনি বলেন, এই স্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার মানও দুর্বল হয়। তাই শিক্ষার মূলভিত্তি যারা গড়ে দিচ্ছেন, তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও বেতন কাঠামো পাওয়া উচিত। সময়ের প্রেক্ষাপটে সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি।
এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন৷
দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
