তবে নৌযানটি ‘পর্যটক সার্ভিস’ হিসেবে বাণিজ্যিক পরিচালনে যুক্ত হচ্ছে ২১ নভেম্বর থেকে। সিদ্ধান্তনুযায়ী প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে পিএস মাসুদ বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে বরিশালে পৌছবে। আবার প্রতি শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বরিশাল থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় পৌছার কথা রয়েছে। ১৮৭৪ সালে বাষ্পীয় প্যাডেল হুইল জাহাজের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠি খুলনা রুটে যে রকেট স্টিমার সার্ভিস চালু হয়েছিল, পর্যাপ্ত নৌযান থাকার পরেও ২০২০ সালের আগেই তা অনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারী সংস্থাটির বহরে নৌযান আর বড় বড় কর্মকর্তার অভাব না থাকলেও শুধু তা জনসেবায় নেই। তবে ২১ নভেম্বর থেকে পিএস মাহসুদ বাণিজ্যিক পরিচালনে আসলেও ঢাকা-বরিশাল নৌপথে যাত্রীভাড়া এখনো নির্ধারণ হয়নি। নৌযানটিতে প্রথম শ্রেণীতে বাতানুকূল ১২টি কক্ষে ২৪টি শয্যা ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে সাধারণ ২৪টি শয্যা থাকলেও সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোন শ্রেণিরই ভাড়া নির্ধারণ হয়নি।
তবে সংস্থাটির একটি সূত্রের মতে, নৌযানটির পরিচালন ব্যয়ের হিসেবে প্রথম শ্রেণীর একজন যাত্রী প্রতি ব্যয় ৪ হাজার টাকার ওপরে পড়তে পারে। কিন্তু ২০২০ সালে রকেট স্টিমার সার্ভিস বন্ধের সময় ঢাকা-বরিশাল নৌপথে প্রথম শ্রেণীতে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ১২শ টাকার মত। বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল বেসরকারি নৌযানে বাতানুকূল প্রথম শ্রেণীতে জনপ্রতি ভাড়া ১ হাজার টাকা। আর দ্বৈত শয্যার সংযুক্ত শৌচাগার সহ ভিআইপি শ্রেণীতে ভাড়া ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে ঐসব ভিআইপি শ্রেণিতে ৩-৪ জন যাত্রী ভ্রমণেরও সুযোগ রয়েছে। সে নিরিখে বিআইডব্লিউটিসি’র এ পর্যটক সার্ভিসে প্রথম শ্রেণিতে যাত্রীভাড়া আগের ১২শ টাকা থেকে ৫০ ভাগের বেশী বৃদ্ধি না করার অনুরোধ করেছেন বরিশালের একাধিক মহল। এসব কিছুর পরেও বিশ্ব ঐতিহ্যের প্যাডেল স্টিমার আবার ফিরছে ঢাকার বুড়িগঙ্গা থেকে চাঁদপুরের মেঘনা-পদ্মা হয়ে বরিশালের কীর্তনখোলায়। কিন্তু তা সার্বজনীন যাত্রী পরিবহনে না আসায় কিছুটা হতাশা থাকছে বরিশাল বাসীর মনে।
অতি সম্প্রতি নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) সাখাওয়াত হোসেন বরিশাল সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বিআইডব্লিউটিসি’র হাতে থাকা ৪টি প্যাডেল স্টিমারের অন্তত দুটি খুব শীঘ্রই সচল করার কথা জানিয়ে তা ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল রুটে যাত্রী পরিবহন করবে বলেও জানিয়েছিলেন। ঐ সভায় সংস্থাটির চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। করোনা মহামারী শুরু এবং পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের অনেক আগেই নানা অজুহাতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি অনানুষ্ঠানিক ভাবে ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ করে দিয়েছিল।
বিশ্বের কয়েকটি দেশের মত বাংলাদেশেও এখন হাতেগোনা ৪টি প্যাডেল জাহাজ অবশিষ্ট থাকলেও তা যথাযথ সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি’র এতদিনের উদাসীনতা ও রহস্যঘেরা কর্মকান্ডে হতাশ ও ক্ষুব্ধ দক্ষিণাঞ্চলের আমজনতা। এমনকি ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়ার পরে ইজারাদার নৌযানটির উপরিকাঠামোর প্রায় পুরোটাই ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। নির্ধারিত ভাড়াও পরিশোধ করেনি।
শেষ পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ নিয়ে নৌযানটি উদ্ধার করতে হয়েছে। বকেয়া আদায়ে আদালতে মামলা চললেও নৌযানটি পুনরায় ইজারা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এমনকি যে ইজারাদার নৌযানটির ব্যাপক ক্ষতি সাধন সহ ভাড়া পরিশোধ করেনি, তারাও পুনরায় অষ্ট্রিচ’কে ভাড়া নেয়ার তদবির শুরু করেছ বলেও জানা গেছে। এসব নৌযান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ইউনেস্কোর মাধ্যমে ‘বিশ^ ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণার সুযোগ রয়েছে বলেও মনে করছেন একাধিক ইতিহাসবিদ।
