আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ আগৈলঝাড়ার একজন সৎ ও আদর্শবান শিক্ষকের অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ না পাওয়ায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শিক্ষক মিজানুল হক । উপজেলা সদরের ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির ইংরেজি শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুল হক অবসরে যাওয়ার পরে অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ না পাওয়ায় অমানবিক ভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
বর্তমানে ডায়বেটিক, হাই প্রেসার, কিডনি ড্যামেজসহ জটিল রোগে ভুগে অন্ধ অবস্থায় বিছানায় দিন কাটছে। সৎ ও মেধাবী শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর মিজানুল হক এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া এক পা’ও চলাচল করতে পারছেন না। মেয়ে—জামাতা ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় শিক্ষক মিজানুল হকের ঔষধের পাশাপাশি ডায়ালাইসিস চলছে, মহান শিক্ষকতা পেশায় দীর্ঘ ৩০ বছর চাকরি করে অবসরে যাওয়ার তিন বছরের অধিক সময় পার হলেও অবসর ভাতা ও কল্যান ফান্ডের ৩০ লক্ষাধিক টাকা সময় মত পেলে শিক্ষক মিজানুল হক সু—চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পেত।
অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের প্রাপ্ত টাকার অভাবে ধুকে ধুকে মৃত্যুর পথযাত্রী হতে হত না তাকে। তিনি অর্থের অভাবে কোন উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না, তার একমাত্র বিবাহিত মেয়ে সামিয়া আক্তারের ঢাকার পল্লবীর বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। মো. মিজানুল হকের আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সুনাম রয়েছে এবং সবাই তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে জানে।
তিনি ৩০ বছর যাবত বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন, ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত পালন করে ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর অবসরে যান, পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মহা পরিচালকের বরাবরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। অবসরকালীন সময় তিনি নবম গ্রেডপ্রাপ্ত ছিলেন, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনি অষ্টম গ্রেড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকা কালে তার সৎ ও সরলতার সুযোগ নিয়ে ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির শিক্ষক রনজিৎ কুমার বাড়ৈ বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা প্রভাব খাটিয়ে খরচ করে, ওই টাকার সমস্ত দায়দ্বায়িত্ব পরে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুল হকের উপর। এ কারণে মানসিক চাপ ও আত্মমর্যাদায় আঘাত হানায় শিক্ষক মিজানুল হক মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও অসুস্থ হয়ে অন্ধ হয়ে যায়।
এর পূর্বে ২০০৮ সালে তার একমাত্র ছেলে বরিশাল বিএম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. ইমরান হোসেন আত্মহত্যা করে, ছেলের শোকে তার স্ত্রী সাজেদা খানম উন্মাদ হয়ে যায় এবং সে নিজেও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির সাবেক ছাত্র মো. ইসমাইল পাটোয়ারী জানান, মিজানুল হক স্যার একজন ভাল মানের শিক্ষক ও ভাল মানুষ, তার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করা আমিসহ হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, স্যারের দুঃসময়ে আমাদের স্যারের পাশে দাঁড়ানো দ্বায়িত্ব।
এ ব্যাপারে ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির সিনিয়র শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন মিজানুল হক স্যারের সাথে কাটিয়েছি, তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ, তার এই দুর্দিনে অবসর ভাতা ও কল্যান ফান্ডের টাকা প্রয়োজনের সময় যদি না পান তাহলে মৃত্যুর পরে সেই টাকা পেয়ে কি লাভ? এ ব্যাপারে শিক্ষক মিজানুল হকের মেয়ে সামিয়া আক্তার জানান, আমার বাবা অবসরে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থ অবস্থায় আমার কাছে ঢাকায় আছে, আমি সাধ্যমত চিকিৎসা করাচ্ছি।
ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের কাছে দাবী অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা যাতে দ্রুত পেয়ে আমার বাবার সু— চিকিৎসা করাতে পারি। এব্যাপারে আগৈলঝাড়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফারহানা আক্তার বলেন, আর যেন কোন শিক্ষক মিজানুল হক স্যারের মত ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়। তার প্রাপ্ত অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা যাতে দ্রুত পেয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারে তার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের নিকট দাবী জানাচ্ছি।
