কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর কর্তৃক বেড়িবাঁধ প্রশস্ত করে রাস্তা নির্মাণে উচ্ছেদ আতঙ্কগ্রস্ত জিয়া কলোনীর ভূমিহীন পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক হয়রানির প্রতিবাদে কলাপাড়া প্রেসক্লাব চত্বরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধন করেছে।
শনিবার বেলা ১১ প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত খাস জমিতে ২২টি পরিবার তাদের বাড়ি—ঘর নেওয়ার ৬ মাস পরেও এখন পর্যন্ত একটি টিউবয়েল বসানো হয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে বাকি পরিবারগুলোর জন্য আন্দারমানিক নদীর তীর ঘেঁষে নদীর একটা অংশ ভরাট করে পুনর্বাসনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বসবাসের উপযোগী নয়। এই যায়গায় বাড়ি ঘর সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাফাত কন্সট্রাকশনের লোকজন পরিবারগুলোকে হয়রানি করছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রথম পর্যায়ের ২২টি পরিবারের জন্য অতি দ্রুতত বিদ্যুৎ, সুপেয় পানির জন্য টিউবয়েল, পুকুর, চলাচলের রাস্তা এবং পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বরাদ্দকৃত জমির বরাদ্ধ অনুমোদনের কাগজ প্রদান করা।
একই সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হয়রানি বন্ধ করে বাকি পরিবারগুলোর জন্য নদী থেকে যথেষ্ঠ দূরে এবং উঁচু জমিতে যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানায়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য মোঃ ফোরকান হাওলাদার, মোঃ ইব্রাহিম শিকারী, লাইলী বেগম, কবির হোসেন, জসিম প্যাদা, সালেহা বেগম, আল আমিন খান ।
প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম—পটুয়াখালী এর সদস্য সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু, কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চের সদস্যসচিব মনোয়ারা বেগম, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম— পটুয়াখালী এর প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরামের আহবায়ক এবং কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমল মুখার্জি।
ইব্রাহিম শিকারী বলেন, আমরা বাস্তুভিটাহীন হওয়ার কারণে ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকার আমাদেরকে আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিল। যার পর জঙ্গল সাফ করে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাস করে আসছি। বেড়িবাঁধের বাইরের দিকে বসবাস করার ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্ধসঢ়;বাঁশ এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
তারপরও মাছ ধরে, ইট ভাটায় কাজ করে, নির্মাণ শ্রমিক এবং কৃষি শ্রমিক। হিসাবে কাজ করে বিভিন্ন টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করে আসছি। আমাদের এই বসতিতে একটি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটা মাদরাসা এবং মসজিদ রয়েছে। আজকে আমাদেরকে নদীর মধ্যে একটা যায়গা ভরাট করে সেখানে বাড়ি—ঘর নিয়ে চলে যেতে বলে।
আমাদের ইউনিয়নে এত খাস জমি প্রভাবশালীরা ভোগ দখল করে অথচ ভূমিহীন পরিবারের জন্য কি এক টুকরা খাস জমি নাই? মোঃ ফোরকান হাওলাদার বলেন, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ লালুয়ায় অবস্থিত প্রথম টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালীতে প্রশাসনিক ভবন হয়ে ঢাকা— কুয়াকাটা আঞ্চলিক সড়কের সাথে যুক্ত হওয়ার বিকল্প সড়ক হিসাবে পায়রা বন্দরের গেট থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পর্যন্ত বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কাজ শুরু করেছে।
এই রাস্তা নির্মাণ করতে আমাদের কলোনিসহ বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসকারী ১৩৬টি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করা হবে। আমাদের দাবি আমাদেও পুনর্বাসন করে আমাদের উচ্ছেদ করা হউক।
