কবর থেকে নিজের মায়ের মরদেহ তুলে এনে ঘরে মশারি টানিয়ে লেপ–কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখার অভিযোগ উঠেছে সজিব হোসেন (৩২) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। তাছাড়া মায়ের মরদেহ দাফন করায় স্বজনদের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এ অস্বাভাবিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত সোমবার ওই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সজিবের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা। স্থানীয়, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় মোথাজুরী এলাকার খোদেজা বেগম স্বামী আনতাজ আলীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে সজিবকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। কিন্তু সজিব ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
এ নিয়ে প্রায় মায়ের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ হতো। গত শনিবার দুপুরে মা–ছেলের মধ্যে তীব্র বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে অভিমান ও মানসিক যন্ত্রণায় খোদেজা বেগম গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে গত রোববার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনার পর ‘মাকে কেন মাটি দেওয়া হলো’ তা জানতে চেয়ে স্বজনদের হুমকি দিচ্ছিলেন সজিব। কিন্তু রাতের কোনো একসময় সজিব গোপনে কবর খুঁড়ে মরদেহ তুলে নিজ ঘরে নিয়ে আসে। সেখানে মশারি টানিয়ে লেপ–কাঁথা দিয়ে মরদেহটি ঢেকে রাখে।
সোমবার সকালে কবরস্থানে গিয়ে কবর খোলা দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সজিব ঘর বন্ধ করে রেখেছে, আচরণেও অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সজিবের ঘরের তালা ভাঙা হয়।
ঘরের ভেতর মশারির নিচে লেপ–কাঁথায় মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায় খোদেজা বেগমের মরদেহ। সেখান থেকে তখন প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এর আগের রাতে সজিব তার মামা আব্দুল মান্নান মিয়াকে ফোন দিয়ে ‘মাকে কেন দাফন করা হলো’ এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, দাফন কাজে অংশ নেওয়া স্বজনদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এতে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়–আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। খোদেজার বড় ভাই আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, সজিব আমাকে ফোন করে বলেছে মাকে কেন মাটি দিলেন। সে আমাকে খুন করার হুমকিও দিয়েছে। আমাদের পরিবার বর্তমানে চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।
কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুরুজ জামান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও মর্মান্তিক। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মরদেহটি আবারও দাফন করা হয়েছে।
