More

    পরিত্যক্ত প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করে সাবলম্বী বানারীপাড়ার ইউনুস ‘র দৃষ্টান্ত স্থাপন

    অবশ্যই পরুন

    সুমন দেবনাথ, বানারীপাড়া (অতিথি লেখক) :  মানুষের ফেলে দেওয়া বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী প্রক্রিয়াজাত করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বানারীপাড়ার ইউনুস। তার এ উদ্যোগে ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছেন বেশ কিছু বেকার নারী-পুরুষও। বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার ০২ নং ওয়ার্ডে বন্দর বাজার সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে কারখানা গড়ে তুলেছেন ইউনুস।

    ইউনুসের একমাত্র ছোট ভাই খোকন ও মা মাকছুদা বেগম। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পূর্বে মাকছুদা বেগম জীবনযুদ্ধে সফল হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন বাজারে ঝাড়ুদারের কাজ করেছেন। সেখান থেকে সামান্য যা ইনকাম হতো তা দিয়েই দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। পরবর্তীতে তার ও সন্তানদ্বয়ের সততা, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে গড়ে তোলেন কারখানা। মা এবং দুই ছেলে তাদের তিন জনের যৌথ উদ্যোগেই ক্ষুদ্র এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালিত হয়ে আসছে।

    মায়ের প্রতি গভীর মমত্ববোধ শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্বরুপ কারখানার নাম দিয়েছেন মেসার্স মাকছুদা এন্টারপ্রাইজ। যার স্বত্বাধিকারী মোঃ ইউনুস। সেখান থেকে প্রতি মাসে তিনি আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা। জানা যায়, ২০১০ সালে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল কেনা শুরু করেন ইউনুস। পরে সেগুলো ঢাকায় নিয়ে বিক্রি শুরু করেন।

    ধীরে ধীরে ব্যবসার উন্নতি হলে নিজেই রিসাইক্লিং মেশিন কিনে কাটিংয়ের (চিপ) কাজের যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তার এসব পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, প্লাস্টিকের বোতলগুলো তিনি বাড়ির সামনে বস্তাবন্দি করে রেখেছেন। অন্যদিকে মেশিনে ভাঙা সম্ভব এমন প্লাস্টিকের বালতিসহ নানাসামগ্রী মেশিন ঘরের পাশে স্তূপ আকারে রয়েছে। এর পাশেই রিসাইক্লিং করা প্লাস্টিকসামগ্রীর চিপ রোদে শুকাচ্ছেন।

    এ বিষয়ে মোঃ ইউনুস জানান, প্রায় ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে তিনি এই কাজ করছেন। প্রথমে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে প্লাস্টিকের সামগ্রী কিনে তা ঢাকায় বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমানে চিপ করে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। পরিবেশের ক্ষতিকারক এসব সামগ্রী সংগ্রহ করে পরিবেশকে ভালো রাখার পাশাপাশি এগুলো দিয়ে নতুন সামগ্রী তৈরির উৎস তৈরি করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

    প্লাস্টিকের বোতল প্রক্রিয়াজাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়ে ইউনুসের ছোট ভাই খোকন বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ব্যবসার আরও প্রসার করা সম্ভব হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে গ্রামের মানুষের বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি গ্রামের পরিবেশও ভালো রাখা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা বরিশাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং শিল্পে প্রায় ৬,০০০ কোম্পানি রয়েছে এবং ৩০০টিরও বেশি রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট চালু আছে। কিন্তু তারপরেও প্লাস্টিক রিসাইকেলের হার তেমন বাড়েনি।

    সেক্ষেত্রে, বানারীপাড়া উপজেলার মতো জনবহুল একটি জায়গায় এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়, পাশাপাশি কিছু মানুষের কর্মসংস্থান যা আমাদের অর্থনীতিক ব্যবস্থাপনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক ও পর্যটক হাসান আহমেদ সোহাগ জানান, রিসাইকেলিং প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় না হলেও প্রাচীন পদ্ধতিতে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

    বানারীপাড়ায় এমনই এই উদ্যোক্তা বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত মালামাল রিসাইকেলিং করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে, তেমনই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই তরুণদের হাত ধরে বানারীপাড়ায় একটি রিসাইকেলিং শিল্প কারখানা হতে পারে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    প্রাথমিকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, শিক্ষকদের কড়া বার্তা মন্ত্রণালয়ের

    ১১তম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের পর ‘কমপ্লিট শাটডাউন’...