মোঃ মাহিন খান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড, নারী হয়রানি, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামের সভাপতি হাফেজ মো. নুরুল্লাহকে পদ থেকে স্থগিত করার পর শেষ পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা জামায়াতের যৌথ তদন্তে অভিযোগগুলি সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে এক অচেনা নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও কলের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এর আগে ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃষ্ণকাঠি এলাকার একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় শিক্ষকতা করার সময় এক ছাত্রের মায়ের (এক প্রবাসীর স্ত্রী) কাছে বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব পাঠানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ছাত্রের আত্মীয়রা নুরুল্লাহকে আটক করে মারধর করেন। পরে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে গোপন করার চেষ্টা করা হলেও ভিডিও ও জবানবন্দির কিছু অংশ আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এছাড়া স্থানীয়দের অভিযোগ—নুরুল্লাহ কখনো নিজেকে ইসলামিক বক্তা, কখনো সাংবাদিক, আবার কখনো অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধি পরিচয়ে পরিচিত করতেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘মো. ফিরুজ আলম নুরুল্লাহ’ নামে আরেকটি পরিচয় থাকা সত্ত্বেও একাধিক ভুয়া পরিচয় ব্যবহারের অভিযোগ আরও জোরালো হয়।
ঘটনার পর ৩ ডিসেম্বর বরিশাল–ভিত্তিক দৈনিক আমাদের বরিশাল–এর সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নুরুল্লাহকে রিপোর্টার তালিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর জেলা ও উপজেলা জামায়াত যৌথভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে নারী হয়রানি, নৈতিক বিচ্যুতি, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে প্রথমে তাকে ইউনিয়ন সভাপতির পদ থেকে স্থগিত করা হয়। পরে ঘটনার বিষয়বস্তু বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলা জামায়াত জরুরি বৈঠকে নুরুল্লাহকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. ফরিদুল হক বলেন,
“জামায়াতে ইসলামী নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর। অভিযোগ যাচাইয়ের পর তার পদ স্থগিত করা হয়।”
এ ব্যাপারে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুস সালাম জানান,
“অনৈতিক আচরণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও পর্যালোচনা করে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
তবে তিনি দাবি করেন—মাদরাসা–কেন্দ্রিক কিছু ব্যক্তিগত বিবাদের কারণে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ঘটনা বাড়িয়ে প্রচার করেছে এবং নুরুল্লাহকে মারধর করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নুরুল্লাহর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
