মোঃ মাহিন খান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঝালকাঠির দুই সংসদীয় আসনে বিএনপির ভেতরে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) ও ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এতে ধানের শীষের নির্বাচনী কৌশলে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ঝালকাঠি-১ আসনে এক সময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি থাকলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ২০২৩ সালে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচিত হন।
ওই সময় রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার কয়েকজন বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিলে দলীয়ভাবে তাদের বহিষ্কার করা হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নামেন একাধিক কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন রফিকুল ইসলাম জামাল, গোলাম আজম সৈকত, সেলিম রেজা, মোস্তাফিজুর রহমান ও মঈন ফিরোজী।
তারা এলাকায় লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিলেও মনোনয়ন ঘোষণার পর শুরু হয় বিতর্ক। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালকে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার পর স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে, তিনি অতীতে বিতর্কিত ও দল থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে কর্মসূচি করেছেন।
গত ১১ ডিসেম্বর কাঁঠালিয়ার শৌলজালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এবং সেখানে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ আরও বাড়ে। এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আজম সৈকত মনোনয়ন পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। গত ২২ ডিসেম্বর কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। দলীয় সূত্র বলছে, শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন পরিবর্তনের নজির থাকায় তিনি মাঠ ছাড়েননি।
এ বিষয়ে গোলাম আজম সৈকত বলেন, দলীয় প্রতীকের চূড়ান্ত চিঠি না দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দলীয় নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম জামাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে কারা উপস্থিত থাকবেন তা আগে থেকে জানা থাকে না। এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। ঝালকাঠি-২ আসনেও অনিশ্চয়তা- ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) আসনেও মনোনয়ন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্টোকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলেও ঢাকায় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের এক বৈঠকে তাকে আমন্ত্রণ না জানানোয় গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এতে মনোনয়ন পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে। বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয় বিভাজনের সুযোগ থাকবে না। কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
এদিকে ঝালকাঠি-১ আসনে ইসলামী দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় ভোটের সমীকরণ আরও জটিল হয়ে উঠছে। বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে অনিশ্চয়তা কাটাতে না পারলে ভোট বিভাজনের সুযোগ নিতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ঝালকাঠি-১ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭০ এবং নারী ১ লাখ ১২ হাজার ২৫ জন।
