কিল-ঘুষি, লাথিসহ হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। পায়ের তলা থেকে ঠোট পর্যন্ত ক্ষত করে দেয়া হয়েছে। সব যেন বিষ ব্যাথায় আক্রান্ত। দু’টি দাত নড়বড়ে হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে এমন বেধড়ক মারধর করে অচেতন অবস্থায় ঘরে ফেলে রাখা হয় এক সন্তানের মা তুলি বেগমকে (১৯)। পাষন্ড স্বামী ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক শাহাবুদ্দিন এমন নির্দয়ভাবে মারধর করেছে তুলিকে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গন্ডামারি গ্রামে বাড়ি শাহাবুদ্দিনের। এক পর্যায় চেতনা ফিরলে অনেক কষ্টে পড়শিদের সহায়তায় প্রথমে সোমবাড়িয়া বাজারের সুমন ডাক্তারের কাছে যায় তুলি। পরে সন্ধ্য্যার পরে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন প্রায় পাঁচ বছর বয়সী কন্যাশিশু তানহাসহ কলাপাড়া হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন। এ গৃহবধূ জানান, সাত বছর আগে তার বিয়ে হয়। প্রথম একটি বছর ভালোই কাটছিল। এরপর এমন কোন নি নেই যে মারধর করা না হয়েছে। নিত্যদিন মারধর না করলে যেন পাষন্ড শাহাবুদ্দিনের পেটের ভাত হজম হয়না; এমন ভাষ্য তুলির। নানা ছলছুতোয় কথায় কথায় বাড়িঘর থেকে চলে যেতে বলা হয়। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য মারধর করা। শ^শুর শাহজাহান গাজী, শাশুড়ি সালমা বেগম এবং এক ননদ মুক্তা তুলির জীবনকে আরও বিষিয়ে তুলেছে। ঘরে আসলেই স্বামী শাহাবুদ্দিনের কান ভারি করে দেয়া হয়। এমনকি ননদ মুক্তাও একবার তুলিকে মারধর করেছে। তুলি আক্ষেষপ করে জানায়, সারারাত বাইরে থাকে স্বামী নামের পাষন্ড শাহাবুদ্দিন। নেশা করে। বখাটেপনা করে বেড়ায়। দিনে দুপুর পর্যন্ত ঘুমায়। কী করে রাতের বেলা এসব জানতে চাওয়া যেন মহা অপরাধ তুলির। স্বামী শাহাবুদ্দিন কথায় কথায়, ‘তোরে ভালো লাগে না, চইল্লা যা।’ ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য অহরহ মারধর করা হয়। লাথি-কিলঘুষি চলে প্রতিদিন। আর গালাগাল ছাড়া কাটেনা একটি মুহুর্ত। কাপড়-চোপড়সহ কোন কিছুর প্রয়োজন থাকলে তাও বলা যায় না। বর্তমানে তুলির চিকিৎসার জন্য তার মা পক্ষিয়া গ্রামের নাজমা বেগম, বাবা জাকির গাজী হাসপাতালের শয্যার পাশে বসে চোখের পানি ঝারছে। বর্তমানে এ নির্যাতিতা গৃহবধূ তুলি স্বামী নামের শাহাবুদ্দিন শব্দটি শুনলেই আৎকে ওঠেন। বলেন, ‘ মুই এর বিচার চাই। মুই অর লগে আর ঘর-সংসার করমুনা। অয় আমারে মাইর্যা ফালাইবে।’ এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। কলাপাড়া থানার ওসি খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মামলার প্রস্তুতি চলছে। আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।