আগামী ৩০শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা।
এই নির্বাচনে ৩ জন মেয়র প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৪ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসাবে ১১জন প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা নিজ নিজ পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় ও গণসংযোগ চালিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
ইতিমধ্যে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড। হাট-বাজার, চায়ের দোকান, অফিস ও ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা। নির্বাচনে ৩ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর শক্ত অবস্থান থাকলেও বিএনপি মনোনিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও ইসলামী আন্দোলন মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীকে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না মাঠে। এমনকি তাদের পোস্টারেরও দেখা মিলছে না পৌরসভায় সবগুলো এলাকায়। তবে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই ক্ষমতাশীন দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে উৎসবের আমেজ রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায়।
সকাল থেকে মধ্যরাত পযর্ন্ত পৌরসভার অলিতে গলিতে হ্যান্ড মাইক দিয়ে প্রার্থীদের প্রচারণার কাজ চলছে। আবার প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় ঝুলছে তাদের ছবিযুক্ত পোস্টার। ভোটারদের বাড়িতে বাড়িয়ে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন খান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে শো-ডাউন, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। তার দাবী সুষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাকে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত করবেন এবং তিনি নির্বাচিত হলে পৌরসভার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাসহ অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য সচেষ্ট ভূমিকা রাখবেন। অপরদিকে, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জিয়াউদ্দিন সুজনের ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে খুব একটা প্রচার-প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকী লিফলেট, পোষ্টার, ব্যানার বা গণসংযোগেও অনেকটা পিছিয়ে আছেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মীসমর্থকরা তার পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলাসহ প্রচার-প্রচারণায় বিঘœ সৃষ্টি করছেন। বিষয়টি তিনি রির্টানিং কর্মকর্তাকে জানালেও এর প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। তবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে তিনিও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেণ। এছাড়া নির্বাচনের মাঠে আরেক মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন মনোনীত ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর হোসেন গাজীকেও তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে পৌর বন্দরের কিছু কিছু স্থানে পোষ্টার ছাড়াও মাঝে মধ্যে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণা চলছে তার। তিনিও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠ, সুন্দর ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের জোর দাবী জানান। এদিকে সচেতন ভোটাররা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, এর আগের কয়েকটি পৌরসভা নির্বাচনও দেখেছি। অনেকেই নির্বাচনের আগে নানা ধরনের আশ্বাস দেন, কিন্তু ভোটে জয়ী হওয়ার পর আর কোন খোঁজ খবর থাকে না। সে জন্য এবার বুঝে শুনে সৎ এবং যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন।
তারা আরো বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভাটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি গত কয়েক দশকে। তবে এবার মেয়র হিসাবে যে নির্বাচিত হবে তার উচিৎ হবে মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসাবে গড়ে তুলে পৌরবাসীকে উপহার দেওয়া। তাদের দাবী, কোন প্রার্থীর কাছে কখনও টাকা পয়সার জন্য যাবো না, তবে যেই নির্বাচত হোক তার কাছে একটাই প্রত্যাশা তারা যেন পৌরসভার উন্নয়নের কথা ভেবে কাজ করেন। এরআগে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী সহিংসতায় এক আওয়ামীলীগ কর্মী নিহত সহ একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীসমর্থক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে প্রশাসনের পক্ষথেকে বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। সুষ্ঠ, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার লক্ষে প্রশাসনের পক্ষথেকে ভোটারদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে। এজন্য পৌর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষে যা যা প্রয়োজন তার সবই করা হবে। কেউ যদি নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবার পৌরসভা নির্বাচনে মোট ২৫ হাজার ৮৮৮ জন ভোটার ৯টি কেন্দ্রে তাদের ভোট প্রদান করবেন। যাদের মধ্যে ১৩ হাজার ১৭৩ জন পুরুষ ও ১২ হাজার ৭১৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন। তবে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে ভোটের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে। ফলে বিপুল প্রতিদ্বন্দীতাপূর্ন এই নির্বাচনে শেষ মূহর্তে ভোটদের মন জয়ের সর্বাত্বক চেষ্টা চালাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
