আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ মাটিতে কলা গাছ পুঁতে ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ত্র পড়ে
সাপে কাটা যুবকের চিকিৎসা করছেন এক কবিরাজ ও তার দলের সদস্যরা। বাদ্য-
বাজনার তালে তালে মন্ত্র পড়ে আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অদৃশ্যভাবে আস্তে আস্তে
যুবকের শরীর থেকে বিষ চলে যাচ্ছে কলা গাছে। এমনি এক অবিশ্বাস্য ঘটনা
ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়ায়। আর কবিরাজের এই বিষ নামানো দেখতে ওই
বাড়িতে ভিড় করেন আশ-পাশের বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার
পথে সাপে কাটে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের মৃত রফিজ
উদ্দিন ফকিরের ছেলে সালাম ফকিরকে। বাড়িতে এসে সাপে কাটার বিষয়টি বুঝতে
পারলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার
দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের কবিরাজ আলী আকবর ফকিরের কাছে। কবিরাজের
প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ না হওয়ায় বাড়িতে নিয়ে আসা হয় সাপে কাটা ওই
যুবককে। এরপর বাড়িতে এসে ঝাড়ফুঁক করার পাশাপশি ওই কবিরাজ জানান শুধু
ঝাড়ফুঁকে নয়, এই বিষ নামাতে লাগবে আধ্যাত্মিক চিকিৎসা। এর পর ওই বাড়ির
উঠানে মাটিতে কলা গাছ পুঁতে সেই কলা গাছের সাথে ও সাপে কাটা যুবকের
পা’য়ের সাথে সুতা বেঁধে মাথায় কড়ি দিয়ে ঢাক-ঢোল, কাসরসহ বিভিন্ন
বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে পড়া হচ্ছে মন্ত্র এবং মন্ত্রের সাথে সাথে অনবরত নাচ করছেন
কবিরাজ ও তার দলের সদস্যরা।
এ সময় কলা গাছের সামনে জ্বালানো হয় মোমবাতি, আগরবাতি ও ধূপ ।
মাটিতে ঘেরাও দেয়া সীমানার মধ্যে বসে কখনও নাচ করছেন কবিরাজ আবার কখনও
বেহুলা সাঁজিয়ে নাচ করানো হচ্ছে এক কিশোরীকে দিয়ে। আর এই আধ্যাত্মিক
চিকিৎসায় অদৃশ্যভাবে আস্তে আস্তে ওই যুবকের শরীর থেকে বিষ চলে যাচ্ছে কলা
গাছের ডগায়। সুতার মাধ্যমে বিষ কলা গাছে যাওয়ায় ভেঙ্গে যাচ্ছে কলা গাছের
ডগা এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে রোগী। শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ওই
আধ্যাত্মিক চিকিৎসা চলে শনিবার রাত পর্যন্ত। অবিশ্বাস্যভাবে এই বিষ
নামানো দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় করেছে আশ-পাশের বিভিন্ন গ্রামের হাজারো
মানুষ।
সাপে কাটা যুবকের বড় ভাই এরশাদ ফকির জানান, তার ছোট ভাইকে সাপে কাটার
পরে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসায় সে সুস্থ না
হওয়ায় কবিরাজকে ডেকে আনা হয় তাদের বাড়িতে। এর পর বাড়ির উঠানে কলাগাছ
পুঁতে চার পাশে ঘেরাও করে বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্রের তালে মন্ত্র পড়ে বিষ নামানো হয়।
আর এতেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে তার ভাই।
বিষ নামানো দেখতে আসা অভা মুখার্জী, মোকলেচ ফকির, আসলাম ফকির,
জুলহাস পাইক, সজল বালাসহ স্থানীয় লোকজন জানান, এর আগেও তারা
একাধিকবার এভাবে সাপে কাটা রোগীর বিষ নামানো দেখেছেন। তারাও এই
আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় মাধ্যমে ভালো হয়েছেন। তবে আবার কেউ কেউ বলছেন
সাপে কাটা রোগীর আধ্যাত্মিক এই চিকিৎসা দেখতে এসেছেন প্রথমবার।
আধ্যাত্মিক এই চিকিৎসক কবিরাজ আলী আকবর হোসেন জানান, ৬ বছর বয়স থেকে ওস্তাদ অব্দুল আলী গারুলী’র কাছ থেকেই শিক্ষা নিয়ে ৪০ বছর যাবৎ এই পেশায় কাজ করছেন তিনি। আধ্যাত্মিক এই চিকিৎসার মাধ্যমে সাপে কাটা । রোগীকে সুস্থ করতে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪শ থেকে ৫শ সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করছেন ।
সাপে কাটা যুবক মো. সালাম ফকির জানান, সাপে কাটার পর আমার সারা শরীরে
নীল বর্ণ ধারণের পাশাপাশি অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করি। এই কবিরাজের চিকিৎসার
কারনেই আমি সুস্থ হয়েছি।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. বখতিয়ার আল
মামুন জানান, এ ধরণের কোন চিকিৎসার ভিত্তি নেই। এটা চিকিৎসার নামে
অপচিকিৎসা। এতে সাপে কাটা রোগীর বড় ধরণের বিপদের আশংকা থাকে।
সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পিতা মিহির
বরিশাল নিউজ/এসএলটি