বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রকৃতির উদ্বেগের কারণ ‘এল নিনো’। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উষ্ণ জলস্রোতজনিত এ আবহাওয়া পরিস্থিতি চলতি বছরের শেষ দিকেও ভোগাতে আসছে বলে সতর্কতা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, এ বছরের এল নিনো বৈশ্বিক তাপমাত্রার পারদকে আশঙ্কাজনকহারে বাড়াবে। এতে দেখা দিতে পারে নজিরবিহীন দাবদাহ। আবহাওয়াবিদ ও বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগাম পূর্বাভাবাসে দেখা যাচ্ছে এল নিনো ২০২৩ সালে ফেরত আসবে, তাতে আবহাওয়ার তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেবে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর আগে ‘এল নিনো’র প্রভাবেই ‘সবচেয়ে উষ্ণ বছর’ হিসেবে রেকর্ড গড়ে ২০১৬ সাল।
স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’র অর্থ ‘বালক’। ৪ থেকে ১২ বছরের বিরতিতে প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হয় বিশেষ তাপপ্রবাহ। শান্ত সাগরের জলের গড়পড়তা তাপমাত্রায় যখন অন্তত ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে-কমে, তখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটিকেই বিবেচনা করা হয় ‘এল নিনো’ হিসেবে। এ সময় বৈশ্বিক আবহাওয়ার ভারসাম্যেই দেখা দেয় নেতিবাচক প্রভাব। এ কারণে বিশ্বজুড়ে খরা, বন্যা এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়।
বিজ্ঞানীদের মতে, গত তিন বছরে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় প্রচণ্ড শীত ও তীব্র তাপপ্রবাহে অন্যতম ভূমিকা ছিল ‘এল নিনো’র। ২০২২ সাল এরই মধ্যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ উষ্ণ বছর হিসেবে রেকর্ড গড়েছে। গরমের দিক থেকে গত বছরকেও চলতি বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি উত্তর গোলার্ধে শীতের সময় ‘এল নিনো’র আগমনের কারণে এবং কয়েক মাস ধরে এর উষ্ণতা স্থায়ী হলে আগামী ২০২৪ সাল বৈশ্বিক তাপমাত্রায় গড়তে পারে নতুন রেকর্ড।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে নিঃসরিত গ্রিনহাউস গ্যাস এ পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা গড়ে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যার বিপর্যয়কর প্রভাব বিশ্বজুড়ে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে ইউরোপ-আমেরিকায় প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে শুরু করে পাকিস্তান-নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কথা উল্লেখ করা যায়, যা বিপর্যস্ত করেছে লাখো মানুষকে।
যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের দূরবর্তী পূর্ভাবাস কেন্দ্রের প্রধান প্রফেসর অ্যাডাম স্কাইফ বলেন, ‘মনে হচ্ছে আসন্ন এল নিনো ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা নিয়ে আসতে পারে। পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রথম বছরেই চলে আসার আশঙ্কার হার এখন ৫০:৫০।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারণে এল নিনোর প্রভাব ক্রমেই মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। এর সঙ্গে খোদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবটাও মাথায় রাখতে হবে, যেটা সবসময়ই বাড়ছে। এই দুটো বিষয় এক করে ভাবুন, আমরা আসন্ন এল নিনোতে নজিরবিহীন তাপদাহ ভুগতে যাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জেমস হ্যানসেন বলেন, ‘আমাদের আভাস, ২০২৪ সাল সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে রেকর্ড গড়তে চলেছে।’
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসর বিল ম্যাকগুইর বলেন, ‘পরবর্তী এল নিনো এলে ২০২১ ও ২০২২ সালে বিশ্বকে নাস্তানাবুদ করা তীব্র তাপমাত্রাও তুচ্ছ হয়ে যাবে।’
‘এল নিনো’ যে বিপদ নিয়ে আসছে, তা থেকে রক্ষায় এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দেন যুক্তরাজ্যের প্রফেসর অ্যাডাম স্কাইফ।
বরিশাল নিউজ/স্ব/খ
