More

    বরিশালে প্রার্থী চেনানোই এনসিপির প্রথম চ্যালেঞ্জ!

    অবশ্যই পরুন

    বরিশাল অঞ্চলের ৭ নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা করেছে এনসিপি। তবে এসব এলাকায় মনোনীত প্রার্থীদের প্রায় কাউকেই চেনেন না এলাকার বাসিন্দারা। ২/১ জনের সামান্য পরিচিতি থাকলেও বাকিদের চেনা তো দূর, নামও খুব একটা শোনেননি কেউ। এ অবস্থায় ভোটের মাঠে প্রার্থী চেনানোই এনসিপির প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন সবাই। এনসিপি নেতারাও অবশ্য উড়িয়ে দেননি বিষয়টি।

    তারা বলছেন, ‘জয় পরাজয়ের চেয়েও আমাদের কাছে মুখ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষকে রাজনীতিসচেতন করা। জনগণ সচেতন হলে এদেশে আর কখনো দুর্নীতি ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’ প্রথম ঘোষণায় বরিশাল বিভাগের ২১ নির্বাচনি এলাকার মধ্যে ৭টিতে প্রার্থী দিয়েছে এনসিপি।

    শাপলা কলির মনোনয়ন পাওয়া এই সাত প্রার্থী হলেন বরিশাল-৪ (হিজলা-মুলাদী) আসনে আবু সাঈদ মুসা, বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মো. নুরুল হুদা চৌধুরী, ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে ডা. মাহমুদা আলম মিতু, পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে ড. মো. শামিম হামিদী, পটুয়াখালী-১ (দুমকী-সদর-মীর্জাগঞ্জ) আসনে অ্যাডভোকেট জহিরুল আলম মুসা, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন এবং ভোলা-১ (সদর) আসনে অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান।

    পেশায় বা নিজস্ব গণ্ডিতে সু-পরিচিত হলেও রাজনৈতিক নেতা হিসাবে এদের প্রায় কাউকেই চেনেন না নির্বাচনি এলাকার বাসিন্দারা। ঝালকাঠি-২ এলাকায় মনোনয়ন পাওয়া ডা. মিতু পেশায় চিকিৎসক। জন্ম কাঁঠালিয়া উপজেলায় হলেও তার প্রথম জীবনের লেখাপড়া আর বেড়ে ওঠা বরগুনার বেতাগী উপজেলায়।

    বরিশাল নগরীতেও আবাস রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এই নেত্রীর। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় তিনি থাকেন ঢাকায়। পেশায় চিকিৎসক তার স্বামী নির্বাচনি এলাকার রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেছেন দীর্ঘ সময়। রাজাপুর-কাঁঠালিয়ার বহু মানুষের সঙ্গে আলাপকালে ডা. মিতুকে তেমন একটা চেনেন না বলে জানান। তবে তাদের মধ্যে এনসিপির প্রার্থী নিয়ে বেশ আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। শাপলা কলি যে এনসিপির প্রতীক সেটাও তারা জানেন।

    বরিশাল সদর আসনে মনোনয়ন পাওয়া নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী মেঘনা পেট্রোলিয়ামের অবসরপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক। দলে এখন পর্যন্ত কোনো পদ-পদবি না থাকা প্রবীণ এই ব্যক্তি বর্তমানে বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান।

    পটুয়াখালী-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর চাচাতো ভাই নুরুল হুদা। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতিকে সমর্থন করলেও তার কোনো পদ-পদবি ছিল না। বরিশালের কেউ তাকে খুব একটা চেনেও না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য এনসিপিতে যোগদান ও প্রার্থী হয়েছেন বলে জানান তিনি। বরিশাল-৪ নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী হওয়া আবু সাঈদ মুসা এনসিপির বরিশাল জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় সদস্য।

    মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট থানার শেরেবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক মুসার পরিবার থাকে চর উদয়পুর ইউনিয়নে। স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তার চার ভাই যুক্ত আছেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে। বড় ভাই মাইনুদ্দিন জামায়াতের সমর্থনে ইউপি সদস্য প্রার্থী হতে চান ৯নং ওয়ার্ডে। শিক্ষকতার বাইরে অন্য কোনো পরিচয়ে মুসাকে চেনেন না নির্বাচনি এলাকার কেউ। এনসিপির প্রার্থী হিসাবে হিজলা বা মেহেন্দীগঞ্জে নেই তার তেমন পরিচিতি।

    ভোলা সদর আসনে প্রার্থী করা হয়েছে এনসিপির ভোলা জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমানকে। পেশায় আইনজীবী জিয়াউর ঢাকায় আইন পেশায় নিয়োজিত। জেলা এনসিপির আহবায়ক এবং দল ঘোষিত প্রার্থী হলেও নির্বাচনি এলাকার মানুষ তাকে খুব একটা চেনেন না।

    একই অবস্থা পিরোজপুর-৩ আসনের প্রার্থী ড. মো. শামীম মাহিদীর। প্রথম দিকে পিরোজপুর সদর আসনে মনোনয়নের আশায় প্রচারে নেমেছিলেন। পরে অবশ্য পিরোজপুর-৩ আসনে তাকে মনোনয়ন দেয় এনসিপি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহিদী এনসিপির বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনি এলাকার মানুষ খুব একটা না চিনলেও এলাকায় অসংখ্য পোস্টার ব্যানার লাগিয়েছেন মঠবাড়িয়ার ধানীসাফা ইউনিয়নের বাসিন্দা এই এনসিপি নেতা।

    দলের যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে পটুয়াখালী-১ আসনে। বয়সে তরুণ এই আইনজীবীর বাস ঢাকায়। দুমকীর মুরাদিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া জহিরুল এনসিপির প্রার্থী হিসাবে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেননি।

    তাছাড়া নির্বাচনি এলাকার সাধারণ ভোটারদের কাছেও তিনি খুব একটা পরিচিত নন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিনকে দেওয়া হয়েছে পটুয়াখালী-২ আসনের মনোনয়ন। যদিও তিনি এখন আর শিবির বা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন।

    আছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক পদে। তবে তার বাবা এখনো বাউফল উপজেলা জামায়াতের আমির হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫ আগস্টের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে আসা শাহিন এলাকায় মোটামুটি পরিচিত। বাউফলে এনসিপির অফিস উদ্বোধন করে স্বল্প পরিসরে চালাচ্ছেন প্রচার। তার আরো একটি পরিচয় রয়েছে। মুজাহিদুল ইসলাম এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের শ্বশুরবাড়ির দিকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।

    স্বল্প পরিচিত এসব প্রার্থী নিয়ে কতদূর এগোতে পারবে এনসিপি জানতে চাইলে দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘একটি বিষয় খেয়াল করে দেখুন যে, আমাদের যারা প্রার্থী তারা সবাই কিন্তু যার যার পেশায় সু-প্রতিষ্ঠিত। এদের মধ্যে যেমন আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তেমনি আছেন চিকিৎসক, আইনজীবী আর স্কুলশিক্ষক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রচলিত ধারার রাজনীতিবিদদের পেশা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অধিকাংশ এমপি বা প্রভাবশালী নেতা হওয়ার পরই কেবল শিল্পপতি ব্যবসায়ী হন। শুরুটা হয় ওই রাজনৈতিক পেশা দিয়ে। অথচ রাজনীতি কোনো পেশা হতে পারে না।

    জুলাই বিপ্লবের পর বিভিন্ন পেশার মানুষ আমাদের সঙ্গে রাজনীতিতে আসছেন। এদের আয়ের উৎস নিয়েও কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারছেন না। নির্বাচনে জয় পরাজয়ের চেয়েও আমাদের কাছে জরুরি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি সুস্থ ধারায় নিয়ে আসা। রাজনীতিবিমুখ এদেশের সাধারণ মানুষকে রাজনীতিসচেতন করা। এসব প্রার্থী সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলবেন, তাদের রাজনীতিসচেতন করবেন। যাতে ভবিষ্যতে রাজনীতির নামে কেউ দুর্নীতি কিংবা দুর্বৃত্তায়ন প্রতিষ্ঠা করতে না পারে। আমাদের রাজনীতি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার রাজনীতি। আমাদের প্রার্থীরা শুরুতে সেটাই করবেন।’

    সূত্র- যুগান্তর

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বাবুগঞ্জে নিখোঁজের ১৭ দিনেও সন্ধান মেলেনি স্কুল ছাত্রীর

    বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় নিখোঁজের ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও সন্ধান মেলেনি অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া স্কুলছাত্রী নুসরাত জাহান সামিয়ার (১৪)। পরিবার ও...