More

    দক্ষিণাঞ্চলে বিআরটিসির আয় বেড়েছে বাড়েনি যাত্রী

    অবশ্যই পরুন

    সেবা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি’র একমাত্র বাস ডিপোটি সর্বাধীক লাভজনক ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হলেও প্রয়োজনীয় ও ভালমানের বাসের অভাবে যাত্রী সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ অঞ্চলের সাধারন যাত্রীদের সরকারি যানবাহনে ভ্রমণের আগ্রহ থাকলেও ভালমানের বাসের অভাবে প্রতিনিয়ত তাদের হতাশ হতে হচ্ছে।

    গত অর্থ বছরে বিআরটিসির বরিশাল বাস ডিপোটি নিট ৪০ লাখ টাকা মুনাফা করলেও দীর্ঘদিনের পুরনো বাস নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগও অনেক। এমনকি প্রয়োজনীয় বাসের অভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রুট চালু এবং বিদ্যমান রুটে ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধি করাও সম্ভব হচ্ছে না। এরপরেও পুরনো বাসগুলো প্রতিনিয়ত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে সংস্থাটি দক্ষিণে সাগরপাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরের রংপুর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোটির ৫২টি বাসের মধ্যে ৪টি বিকল ও চলাচলের অযোগ্য হয় আছে বহু আগেই। এরমধ্যে অগ্নিদগ্ধ একটি বাস নিলামে বিক্রীর প্রক্রিয়া চলছে। আরো ৩টি বাস মেরামতে রয়েছে।

    অবশিষ্ট ৪৮টি যাত্রীবাহী বাস সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার যাত্রী পরিবহন করছে। এ বাস ডিপোটির ৪৮টি চলমান বাস প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৫টি ট্রিপে ১১ হাজার কিলোমিটার সড়ক পথে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এরসাথে সংস্থার ৮টি দ্বিতল বাস সহ ১১টি বাস প্রতিদিন বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। তবে এ বাস ডিপোটির আয়ের একটি বড় অংশই চলে যাচ্ছে সেতু ও ফেরির টোল প্রদানে।

    এক হিসেবে জানা গেছে, সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোটি থেকে প্রতিমাসে প্রায় ১৯ লাখ টাকা টোল প্রদান করতে হচ্ছে। এছাড়া জ¦ালানী ব্যায় বাবদও প্রায় ৯৫ লাখ টাকা ব্যায় হচ্ছে। অতি সম্প্রতি ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২ টাকা বৃদ্ধির ফলে সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোটির পরিচালন ব্যায় বাড়ছে, কমবে মুনাফার পরিমানও। ফলে রাষ্ট্রীয় এ বাস ডিপোটিও নতুন করে অর্থনৈতিক ঝুঁকির কবলে পড়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ২.১২ টাকা ও বাতানুকুল বাসে ২.৭২ টাকা দরেই যাত্রী পরিবহন করেও বরিশাল বাস ডিপোটি মাসে এখন নিট ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মুনাফা করছে।

    যা রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটির যেকোন বাস ডিপোর মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানা গেছে। তবে বরিশাল বাস ডিপোটির যাত্রীসেবা উন্নয়নে নতুন এসি/নন এসি বাস প্রয়োজন হলেও সেধরনের পদক্ষেপ এখনো অনুপস্থিত। ২০০২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরে বরিশাল মহানগরীতেই প্রথম দ্বিতল বাস সার্ভিস চালু করা হলেও ১/১১ সরকারের সময় বরিশাল মহানগরীর গণ পরিবহন থেকে ২টি দোতালা বাস প্রত্যাহার করা হয়। অথচ গণ পরিবহনে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটির দায় আছে বলে মনে করেন নগরবাসী। পাশাপাশি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া বরিশাল-খুলনা-যশোর-বেনাপোল বাতানুকুল বাস সার্ভিসটি পুনর্বহাল সহ বরিশাল-খুলনা রুটে আরো অধিক সংখ্যক বাস চালু করারও দাবী রয়েছে সাধারন যাত্রীদের।

    স্বাধীনতার পরে তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর-এর প্রচেষ্টায় সর্বপ্রথম বরিশালে বিআরটিসির বাস ডিপোটি চালু হয় ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারী। সেদিন বরিশাল বেলসপার্কে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বরিশাল-ফরিদপুর-গোয়ালন্দঘাট এবং বরিশালÑফরিদপুর রুটে বাস সার্ভিস চালুর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিপোটির উদ্বোধন করা হয়।

    পরবর্তিকালে বরিশালÑমাদারীপুর রুটেও বাস সার্ভিস চালু করে সংস্থাটি। ১৯৮১ সালে বরিশালÑপটুয়াখালী মহাসড়ক চালু হলে সংস্থাটি এরুটে মিনিবাস সার্ভিসও চালু করেছিল। কিন্তু এরশাদের সামরিক সরকার রাষ্ট্রীয় ব্যায় সংকোচন ও কথিত লোকসান প্রতিহত করার নামে ১৯৮২ সালের শেষ দিকে বিআরটিসি’র বরিশাল ডিপোটি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিকালে ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী এম মতিউর রহমানের প্রচেষ্টায় পুনরায় সংস্থাটির বরিশাল ডিপোটি চালু হলেও প্রযোজনীয় বাসের অভাবে তা চলছিল অনেকটা খুড়িয়ে। এমনকি ১৯৮৯ সালে এ ডিপোটির অবস্থা এতটাই করুন হয়ে পড়ে যে, শুধুমাত্র টায়ারের অভাবে কোন বাস রাস্তায় নামতে পারছিলো না।

    বিষয়টি নিয়ে তখন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পরে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে পুনরায় এ ডিপোটি কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। তবে ১৯৯২ সাল থেকে দেশব্যাপী বিআরটিসি সংস্কারের অংশ হিসেব বরিশাল ডিপোটিও নতুনভাবে সচল করা হয়। সেই থেকে এর নবযাত্রা শুরু। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোটিকে। তবে এখন এ ডিপোটির প্রায় সব যাত্রীবাহী বাসই দীর্ঘদিনের পুরনো। অনেক গাড়ীই মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

    পুরনো এসব বাসে ভ্রমনে যাত্রীদের অনেক দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে। এমনকি অনেক বাস সুপারভাইজার ও চালক কর্তৃপক্ষের দেয়া রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নামে দূরপাল্লার গাড়ীতে স্থানীয় পর্যায়ের যাত্রী পরিবহন করায় মূল যাত্রীরা চরমভাবে নাকাল হয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। লোকাল যাত্রী পরিবহন নিয়ে বিভিন্ন রুটে বেসরকারী বাসমালিকÑশ্রমিকদের সাথে বিবাদও ঘটছে প্রায়শই।

    তবে এসব কিছুর সাথে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটির দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বাস ডিপোটিতে অবিলম্বে নতুন ও ভালমানের যাত্রীবাহী বাস প্রদানের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সাধারন যাত্রীরা। এসব বিষয়ে বিআরটিসির বরিশাল বাস ডিপোর ম্যানেজার অপারেশন এর এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    হাদির হামলার বিষয়ে যা বললেন সাংবাদিক ইলিয়াস

    ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দুপুরে...