বরিশালে অভিনব এক প্রতিবাদী সংবাদ সম্মলন হয়েছে। আজ সকালে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে উন্মুক্ত স্থানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে বরিশাল নগরীর ৮০ বছরের পুরনো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব যথাস্থানে পুন: স্থাপন করে ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এডভোকেট মীর আমিন উদ্দিন মোহন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা এবায়দুল হক চান, বাসদ নেতা ডা. মনীষা চক্রবর্তী, উন্নয়ন সংগঠক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু, অধ্যাপক নৃপেন্দ্রনাথ বাড়ৈ. সাবেক ফুটবলার গাজী দুলাল, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঐতিহ্যবাহি বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও মাঠ রক্ষা কমিটির শুভেচ্ছা জানবেন । আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন, গত ১১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ গভীর রাতে বরিশালের ঐতিহ্যবাহি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটিকে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এবং এর সকল দলিলপত্র আসবাবপত্র লুট করা হয়েছে। যা অত্যান্ত নিন্দনীয় ও বর্বরোচিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও আইনত বিচার সহ ক্লাব ও মাঠ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছি।
অবিভক্ত বাংলায় ব্রিটিশ শাসনকালে জাতীয় জাগরণের প্রতীক হিসেবে বরিশালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত। মূলত খেলাধূলায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জমিদার ও মুসলিম সম্রান্ত পরিবার মিলে বরিশাল শহরে এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করে। এটি কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠার পরে তবে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি তখন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৩৭ সালে বরিশালের জমিদার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী সাহেবের পুত্র সৈয়দ ফজলে রাব্বী বরিশাল নগরের বরিশাল মৌজায় ৩৩০ শতাংশ জমি দান করে ১ এবং ১৯৪২ সাল থেকে এই স্থানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে এবং তখন থেকেই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে দলিল সূত্রে এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সেক্রেটারির অনুকূলে উক্ত ৩৩০০ সম্রাংশ জমি বিএস পর্চা অনুসারে নিজস্ব অধিকার ভূক্ত।
ইতিহাসের প্রথম দিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি মুসলিম ছেলে-মেয়েদের স্বার্থে পরিচালিত হলেও তা অচিরেই সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন খেলাধূলার প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান আমল সহ বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী বরিশালের ক্রীড়া অংঙ্গণে এই ক্লাবটির অবদান অপরিসীম ।
গৌরবের অধ্যায় হিসেবে ১৯৩৮ সালের দিকে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক সাহেবে অনুপ্রেরণা খান বাহাদুর হাসেম আলী খান এবং বাংলা বাজারের মেছের আলী তালুকদার সাহেবের প্রচেষ্টায় কলকাত মোহামেডান ক্লাবের সাথে বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাথে শহরের বেল্স পার্কে এক প্রীতি খেলা অনুষ্ঠি হয়েছিল ।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব মাঠে নিয়মিত ছেলে মেয়েদের ভলিবল, বাস্কোট বল, ব্যাডমিন্টন, হাডুডু সহ ছেটোে ফুটবল ও ক্রিকেট ছাড়াও ক্লাবের পক্ষ থেকে নানা প্রকার ইনডোর-আউটডোর খেলা পরিচালনা করা হত। বলা এই ক্লাবটি ছিল বরিশালের অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত খেলার জায়গা যা খেলোয়াড়দের জন্য গর্বের স্থান।
সারা দেশের ন্যায় খেলাধূলার নানা প্রতিকুলতার অভাবে ক্লাবটির খেলাধূলার পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে, এর জন্য তো এর জমি দানকারী ও প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্দেশ্য ভূলুণ্ঠিত হতে পারে না। হয়তো এই সুযোগটির জন্য কেহ প্রহর গুনে ছিলেন।
আমরা জানি কোন ব্যক্তির মাথায় সমস্যা হলে তার জন্য চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু সে ব্যবস্থা না করে কি আমরা মাথা কেটে ফেলি? তেমনি ক্লাব পরিচালনার যে কোন সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া সম্ভব। তাই বলে ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে একটি রেকডিয় সম্পত্তির ঐতিহ্যবাহি ক্লাবকে রাতের আধারে গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া মহত্তের কাজ নয়। এটি বর্বোরোচিত ও লোমহর্ষক। প্রথম পর্যায় স্থানীয় ও জাতীয় পত্রপত্রিকায় এর দায় কেহই স্বীকার করেনি। এর পাশাপাশি লক্ষ্য করছি একটি মহল ক্লাবটিকে নিয়ে নানা অপবাদ প্রচার করে নগরবাসিকে বিষিয়ে তুলেছে, বলা চলে এটিও এক প্রকার দুর্বৃত্তায়ন। আমরা মনে করি ঐতিহ্যবাহি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি গুড়িয়ে দিয়ে আপাতত সফল হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
বরিশাল নগরের সর্বসাধারণ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে এবং সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগী হয়েছে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে যাহারা খেলাধূলা করেছেন এবং এর সাথে যাদের আত্মার সম্পর্ক তাদের মতামত গ্রহণ করে ক্লাব ও মাঠ উদ্ধারে সংগঠিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিশিষ্ট সমাজসেবক এ্যাডভোকেট মীর আমিন উদ্দিন মোহনকে আহবায়ক এবং সমাজ সংগঠক নজরুল ইসলাম খানকে সদস্যসচিব করে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবি, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক, ছাত্র যুব সমন্বয়ে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহি বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও মাঠ রক্ষা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবে। ইতিমধ্যে কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১ মার্চ ২০২৩ তারিখ বুধবার সকাল ১০টায় ঐতিহ্যবাহি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব চত্তরে ‘মানববন্ধন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর জন্য নগরে পথসভা, প্রচারপত্র বিলি সহ নানা জনঅংশগ্রহণ মূলক কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে।
আমরা সকলের সহায়তা চাই, সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই। বরিশাল নগরে নিজস্ব ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহি বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও মাঠ উদ্ধার করে গৌরবের খেলাধূলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই। যতদিনে এই পরিস্থিতি বিরজমান না হবে, ততদিন পর্যন্ত মাঠের ও আইনী লড়াই অব্যহত থাকবে।