রোববার লাহোরে এশিয়া কাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রানের সংগ্রহ পায় তারা। জবাব দিতে নেমে ২৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানরা। এ জয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল নানা কিছু নিয়ে। ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশ অবশ্য বেছে নিলো ঠিক পরের ম্যাচটিই। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজের জোড়া সেঞ্চুরির পর বাংলাদেশ তুলেছিল বড় রান। এরপর বোলাররাও তাদের কাজটা করেছেন ঠিকঠাক।
এ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট হেরে যাওয়া ম্যাচের একাদশে আসে তিন পরিবর্তন। বদলে যায় উদ্বোধনী জুটিও। আগের ম্যাচে অভিষিক্ত তানজিদ হাসান তামিম ছিলেন না একাদশেই, নাঈম শেখ নামেন মিরাজকে নিয়ে। ফজল হক ফারুকী এতদিন বাংলাদেশের টপ-অর্ডারদের জন্য বিভীষিকা হয়ে থাকলেও এ ম্যাচে শুরু থেকেই স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাননি তিনি।
ফারুকীর করা প্রথম ওভারেই আসে ১৪ রান। রানের গতি পাওয়ার প্লে জুড়েই ছিল ওভার প্রতি ছয়ের ঘরে। দশম ওভারের শেষ বলে এসে নাঈম শেখ বোল্ড হন মুজিব উর রহমানের বলে, তখন বাংলাদেশের রান ৬০। ৫ চারে ৩২ বলে ২৮ রান করেন নাঈম। ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আসে এরপরও।
তিনে খেলতে পাঠানো হয় তাওহীদ হৃদয়কে, এ জায়গায় থিতু হওয়া শান্তর বদলে। হৃদয় অবশ্য ফেরেন নিজের দ্বিতীয় বলেই, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো ইব্রাহিম জাদরানের হাতে। হুট করে দুই উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এরপর রানের গতিটাও কিছুটা কমে আসে। পাওয়ার প্লের পরের দশ ওভারে আসে কেবল ৪৮ রান। মিরাজ বেশিই ডট বল খেলছিলেন। এক সময় ৪৬ বলে তার রান ছিল ২৮। কিন্তু এই ব্যাটার ছিলেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সময়ের সঙ্গে হাত খুলেছেন তিনি। মাঝে ফজল হক ফারুকীর ৩৩তম ওভারে ১৭ রান নেন শান্ত।
মিরাজ অবশ্য সাজঘরে ফেরেন আউট না হয়েই। ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে মুজিব উর রহমানকে ছক্কা মারেন তিনি, তখনই ব্যথা পান হাতে। তার জায়গায় উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। নট আউট থেকে ক্রিজ ছাড়া মিরাজ ১১৯ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ১১২ রান করেন। শান্তর সঙ্গে তার জুটি ছিল ১৯০ বলে ১৯৪ রানের।
মিরাজ উঠে যাওয়ার দুই বল পরই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্তও। মিরাজের মতো শান্তও তার সেঞ্চুরি ছুয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হওয়ার আগে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ বলে ১০৪ রান করেন তিনি। তবে দুই সেঞ্চুরিয়ানের বিদায়ের পরও দারুণভাবে ইনিংস টানে বাংলাদেশ।
অভিষিক্ত শামীম হোসেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই হাঁকান ছক্কা। ৬ বলে ১১ রান করা এই ব্যাটারও হন রান আউট। তবে বাংলাদেশের রান তিনশ ছাড়িয়েও যায় অনেক দূর। ৬ ওভার করা ফারুকী ৫৩ রান ও রশিদ খান ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে থাকেন অপরাজিত। আফগানদের পক্ষে দুটি উইকেট নেন মুজিব ও গুলবাদিন নাঈব।
বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় আফগানিস্তান। প্রথম ওভারে স্রেফ এক রান দেন তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে শরিফুল করেন দুর্দান্ত বল। কোনো রান না দিয়েই তিনি তুলে নেন রহমানউল্লাহ গুরবাজের উইকেট। আগে একবার বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে যাওয়া এই ব্যাটার ৭ বলে ১ রান করে এলবিডব্লিউ হন। এ দফায় নিজে রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি।
এরপর অবশ্য দুটি জুটি গড়ে উঠে আফগানদের। ৭৮ রানের জুটি এবার ভাঙেন দ্বিতীয় স্পেলে করতে আসা তাসকিন আহমেদ। তার অফ কাটারে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন রহমত শাহ। তার বিদায়ের পর ইবরাহিমের সঙ্গী হন হাশমাতুল্লাহ শাহিদী। এবার তাদের ৫২ রানের জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ।
তার বিদায়ের পর একরকম ধ্বসেই পড়ে আফগানদের ব্যাটিং। হাশমাতুল্লাহ শাহিদীও ৬ চারে ৬০ বলে ৫১ রান করে আউট হয়ে যান, শরিফুল ইসলামের বলে তার ক্যাচ নেন হাসান মাহমুদ। এরপর দলটির কোনো ব্যাটারই সেভাবে হাল ধরতে পারেননি। শেষদিকে ১৫ বলে ২৪ রান করে চেষ্টা করেছিলেন রশিদ খান। কিন্তু শেষ ব্যাটার হিসেবে তাসকিনের শিকার হন তিনি।
তাসকিন ৮ ওভার ৩ বল হাত ঘুরিয়ে ৪৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া ৯ ওভারে ১ মেডেনসহ ৩৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।