More

    স্বতন্ত্র সাদিকে বাধা হবে না আওয়ামী লীগ!, উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা

    অবশ্যই পরুন

    স্টাফ রিপোর্টারঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় হাইকমান্ড কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। এমনকি নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে বা তাদেরকে সরে যেতে বাধ্য করছে না আওয়ামী লীগ। সাংবাদিকদের প্রশ্নত্তোরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এবং তিনি জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি তার জনপ্রিয়তায় এগিয়ে যায় তাদের আমরা বাধাগ্রস্ত করতে পারি না, এটাই গণতন্ত্র। আ’লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের পর বরিশাল সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া আরও চূড়ান্ত হলো। সেক্ষেত্রে সাদিক যে ৭ জানুয়ারির ভোটে নৌকা প্রার্থী কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুকের শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন তার আর কোনো অবকাশ রইল না।

    বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে সিদ্ধান্তে অনঢ় আছেন। তার পক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে জোরেশোরে, কী ভাবে নেতাকে নিয়ে বৈতরণী পার হওয়া যায় সেই পন্থাও খোঁজা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক সাদিক আব্দুল্লাহকে নির্বাচনে মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে নানান প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন, সেক্ষেত্রে তিনি হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন। যদিও ২৬ নভেম্বর মনোনয়ন ঘোষণার আগেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন যে বঞ্চিত কেউ জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন।

    কিন্তু মনোনয়ন ঘোষণার পরে আ’লীগের পদধারীসহ যত্রতত্র ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলে তৃণমূলে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ। বিশেষ করে মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল ৫ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে এখানে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। দুদিন পূর্বে শান্তি সমাবেশে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমকে বিষাদগার করে বক্তব্য রাখেন। ওই বক্তব্যের বেশ কিছু বিষ্ফোরক মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোকপাত হয়, হচ্ছে এবং যা নিয়ে জাহিদ ফারুক অনুসারীরা মাঠে নেমেছেন, চাইছেন দলীয় পদ থেকে আ’লীগ নেতা জাহাঙ্গীরের অপসারণ।

    বরিশালের শীর্ষস্থানীয় আ’লীগ নেতার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা সমলোচনার সৃষ্টি করে। এবং এনিয়ে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে চলে সরব আলোচনা। বলা হচ্ছিল, এমন বক্তব্যের জেরে সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হতে পারে, সেক্ষেত্রে বরিশাল মহানগর কমিটিও ভেঙে দিতে পারে আ’লীগ।

    কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী বরিশাল মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি হাইকমান্ড। বরং দলটি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের যে বক্তব্য আজ মিডিয়া প্রচার করেছে, তাতে রীতিমত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ঘাম ঝরে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বলেছেন, কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী যদি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র হন, তাতে দলের কোনো আপত্তি নেই। বরং সাংগঠনিক দক্ষতায় যদি কেউ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারেন, তাকে দল স্বাগতও জানাবে।

    সাদিক আনুসারীদের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক নির্বাচন পূর্ব মুহূর্তে রাজধানীতে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ ভোটের মাঠ থেকে সরাতে বিভিন্ন মহল থেকে লবিং-তদ্বির করে যাচ্ছেন। কারণ সাদিক আব্দুল্লাহ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে বরিশাল সদর আসনে মনোনীত করায় বেকে বসেছে। জাহিদ ফারুকের পক্ষে কাজ করবেন না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এবং তারা তাদের নেতা সাদিক আব্দুল্লাহকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করে আছেন। সাদিক অনুসারী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সংকল্পও এমনটাই।

    এদিকে শনিবার সকালে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের অনুসারীরা বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ওই বিষ্ফোরক বক্তব্যের জন্য মহানগর আ’লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীরের অপসারণ দাবি করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিমের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, বরিশাল মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহজাহান হাওলাদার, কাউন্সিলর সাহিন সিকদার, জিয়াউর রহমান বিপ্লব, এনামুল হক বাহার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান প্রমুখ। বক্তারা বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি দ্রুত ভেঙে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।

    এরই মধ্যে যখন দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুল বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার হলো, ঠিক তখন আ’লীগ ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি দিবস’ উপলক্ষে সমাবেশ করছিল।

    এছাড়া সমাবেশ থেকেও মহানগর আ’লীগের নেতারা সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, সাদিক আব্দুল্লাহ প্রার্থী হচ্ছেন। এই সমাবেশে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতা অংশ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসও উপস্থিত ছিলেন, তিনি এবার বরিশাল ২ আসনে নৌকার প্রার্থী। এছাড়া সকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো ভাই বর্ষীয়ান আ’লীগ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র অনুসারী।

    ফলে বরিশাল জেলা ও মহানগর আ’লীগ যে সাদিক আব্দুল্লাহকেই সমর্থন দিয়েছে বা দিচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা নেই। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বরিশাল আ’লীগের কর্ণধর যদি সাদিক আব্দুল্লাহই হন, তাহলে গত ৫ বছর সদর আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক কী ভূমিকা রাখলেন স্থানীয় রাজনীতিতে। নৌকা বরাদ্দ পাওয়ার পরেও যে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আছেন।

    সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে মিডিয়ায় যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে নৌকা প্রার্থীদের ঘাম ঝরারই কথা। কারণ বরিশাল সদরসহ অধিকাংশ আসনে যাদের প্রার্থী করা হয়েছে, তাদের নিজস্ব কোনা কর্মীবাহিনী নেই, আবার যাছে, তাও সীমিত। কিন্তু নৌকার প্রার্থী হবে, কিন্তু স্থানীয় আ’লীগের সমর্থন থাকবে না এমন প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ এবার বিষিয়ে উঠতে পারে।

    যদিও জাহিদ ফারুক তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে ইতিমধ্যে একটি নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছেন। ১২ জুন সিটি নির্বাচনে সাদিকের চাচা আবুল খায়ের বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন, বলা হচ্ছে তাতে নৌকা প্রার্থী জাহিদ ফারুকের কারিশমা আছে। অবশ্য ওই নির্বাচনে খোকনের পক্ষে দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছিলেন। এখন সাত জানুয়ারির ভোটে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক জনতার রায় নিজের পক্ষে নিতে পারবেন কী না সেটাই দেখার অপেক্ষা।’

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশালসহ ৭ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

    দেশের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।  মঙ্গলবার...