আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ টানা বৃষ্টিতে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে নদ—নদী ও খালে পানি বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, লঘুচাপের কারণে গত বুধবার থেকে গতকাল শুক্রবার সারাদিন থেকে কখনও মাঝারি আবার কখনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় অধিকাংশ স্থানে আরও ভারী অথবা মাঝারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রসহ বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কোনো মানুষ।
যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছে তারাই বিপাকে পড়েছেন। যানবাহন স্বল্পতার কারণে অনেক মানুষকে রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেছে। উপজেলার বেশিরভাগ নীচু এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
আগৈলঝাড়া—পয়সারহাট সড়কে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক বাদশা সরদারসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে কোন যাত্রীর দেখা নেই। তারপরে আবার দিন শেষে ইজিবাইকের ভাড়া জমা দিতে হবে।
কিন্তু বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ লোকই রাস্তায় বের না হওয়াতে আমরা কোন যাত্রী পাইনি। গৈলা বাজারের সবজি বিক্রেতা একলেচ সর্দার জানান, সপ্তাহের প্রতিটিদিন এমন সময় ক্রেতাদের ভিড়ে দম ফেলার সময় থাকে না। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গতকাল সকাল থেকে কোনো ক্রেতার দেখা নেই। এছাড়া বৃষ্টির কারণে অনেকের জমির সবজি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলায় গত টানা তিন দিনের বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ সবজি খেত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কৃষকরা খেত থেকে পানি বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের সবজি চাষি ধীরেন মন্ডল, মতি হালদার, শান্তি রঞ্জন হালদার জানান, খেতে পানি জমার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে শসা, মরিচ, পটল, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির। তারা আরও জানান, অল্প বৃষ্টিতে সবজি খেতের কোন ক্ষতি না হলেও অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে খেত নষ্ট হয়ে যায়। তিন দিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ খেতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এতে সবজি গাছে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাবে।
প্রতিটি খেতেরই সবজি পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবিরাম বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাছের ঘের ও পান বরজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শাক—সবজি খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েও ক্ষতির শিকার হয়েছেন আগৈলঝাড়ার কৃষকরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, অতি বর্ষনের কারনে পানের রঙ নষ্ট হয়ে পাতা ঝড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ও লতা পচে যাচ্ছে।
উপজেলার গৈলা গ্রামের কৃষক নির্মল জানান, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে পানের বরজে পানি জমে গেছে। এরকম একটানা আরও কয়েকদিন বৃষ্টি হলে বরজ ধসে পরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পান বরজের গোড়ায় পানি জমে গেলে পান বাঁচানো সম্ভব না।
এদিকে, অনেক কৃষকের মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পুকুর এবং ঘেরের চারপাশে জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করছেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় জানান, বৃষ্টির কারণে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায় কৃষকের খোঁজ—খবর নিচ্ছি। অনেক সবজি খেতে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে কৃষকেরা হাজার হাজার টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারপরেও সবজি খেত রক্ষা করার জন্য নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।