বরিশাল জেলার বিচ্ছিন্ন একটি উপজেলা। যা বিভাগীয় জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০কিঃমি দূরত্ব। চারদিক নদী থাকায় ভৌগোলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন এই উপজেলাটি।নানা সমস্যা আর প্রতিকূলতায় জর্জরিত এ উপজেলার বাসিন্দারা।উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে মধ্য ১০ টি নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন। জেলা অথবা উপজেলা বন্দরে আসতে তাদের একমাত্র বাহন ইঞ্জিন চালিত ট্রলার।

৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মইদুল ইসলাম পরবর্তীতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন, ৯১ তে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন আহমেদ ৯৬ তে বিএনপির শাহ এম আবুল হোসেন ২০০১ পূনরায় সংসদ নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর।২০০৮ সালে বিএনপির মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ২০১৪-২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেব লীগের সেক্রেটারি পংকজ নাথ বরিশাল -৪ অর্থাৎ এই আসনটির প্রতিনিধিত্ব করেন।
এছাড়াও আছেন এই উপজেলার কৃতি সন্তান প্রখ্যাত সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরী কবি আসাদ চৌধুরী লেখক ও নাট্যকার আতিকুল হক চৌধুরী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোঃ নরুল ইসলাম।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাস বিরোধী ভাস্কর্য রাজু।সেই ইতিহাসের নায়ক রাজুর জম্ন ও এই মেহেন্দিগঞ্জে। রয়েছেন পাতার হাট বন্দরের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রয়াত গান্ধী বাবু।

রাষ্ট্র ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকা অবস্থায় ও শিক্ষা সংস্কৃতি বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে আছেন এ জনপথের মানুষ।নৌ পথ হওয়ায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম লঞ্চ।বিভাগীয় জেলা শহর বরিশাল হওয়ায় রাষ্ট্রীয় সেবার জন্য এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় এ উপজেলার বাসিন্দাদের।শুকনো মৌসুমে নদীর ন্যবতা বর্ষায় তীব্র স্রোত আর নদীর ভাঙন নিয়ে প্রতিনিয়ত বসবাস করতে হয় তাদের। তাদের জীবন জীবিকা ও ব্যবসা বাণিজ্য এই নদী কেন্দ্রিক ই।
২০০৩ সালে এ উপজেলা অন্ধকারের অমানিশা দূর হয়। তৎকালীন বিএনপি সরকার আমলে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর প্রয়াসের দূগর্ম এই মেহেন্দিগঞ্জে বিদ্যুৎ এর আলো জ্বলে। এখন পযন্ত মেহেন্দিগঞ্জের আমল পরিবর্তন এতটুকু ই।
শাহ এম আবুল হোসাইন তৎকালীন সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিমন্ত্রী থাকায় অবস্থায় তার আর তেমন কোন সফলতাই নেই মেহেন্দিগঞ্জের জন্য।
নদী ভাঙন মেহেন্দিগঞ্জের একটি বিরাট সমস্যা।প্রতি বছরই ভাঙনের কবলে পরে ছোট হয়ে আসছে এ উপজেলার মানচিত্র।এখন পযন্ত এতগুলো এমপি মন্ত্রী এ আসনের নিবার্চিত জনপ্রতিনিধি থাকা স্বত্বেও নদী ভাঙনের কবল থেকে উদ্ধারে কোন কার্যকর ভূমিকা নেয় নেই।
শিক্ষায় এগিয়ে যেতে না পারলে সে জাতি অচিরেই পিছিয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। গত সংসদ মেহেন্দিগঞ্জের শিক্ষার মান ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। তার হাত ধরে উপজেলায় একমাত্র পুরনো কলেজ আরসি কলেজ সরকারি করণ করা হয়। পাতার হাইস্কুল সরকারি করণ করা হয়। এছাড়া ও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজ এমপি ভুক্ত করণ করা হয়েছে। উপজেলায় একটি কারিগরি ভোকেশনাল ও একটি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ স্থাপন করতে পারলে এখনকার শিক্ষার্থীরা এখানে বসেই কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহন করতে পারত। ফলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও কর্ম শিক্ষার প্রসার ঘটত।সময়ে সাথে এ উপজেলার শিক্ষার্থীদের এটা প্রানের দাবি।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ উপজেলায় খুবই নাজুক অবস্থা। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে বিভাগীয় শহর বরিশাল বা ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়।যদি ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য বিগত এমপি একটি নৌ এম্ব্যুলেন্সের ব্যবস্থা করছেন কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণ ও ঢাকা থেকে ডাক্তার এনে মাসে ২-৩ বার যদি সেবা দেওয়া যেত তাহলে কিছুটা সমস্যার সমাধান হত।তাছাড়া এখানে কোন প্রাইভেট হাসপাতাল ও গড়ে উঠে নেই।

সমাজ ও সংস্কৃতি চর্চা জাতি গঠনে অনেক ভুমিকা রাখে। উপজেলায় শিশু একাডেমি, গণ গন্থগার, থিয়েটার, শিল্পকলা, সাহিত্য আড্ডা, পাঠাগার, ক্লাব নাম মাত্র থাকলে ও তাদের উল্লেখ যোগ্য কোন কর্ম কান্ড নেই।সমাজের সংস্কৃতি মনা লোকজন নিয়ে এ চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।কেননা দেশের অনেক গুণী শিল্পীরা এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে এসেছে।
সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সমাজকে অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করা যায়।তরুণদের মধ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারলে তারা সমাজের মাদক ইভটিজিং বাল্যবিবাহ এ সব বিষয়ে তারা প্রতিবাদ করতে পারবে।উপজেলার ভিতরে কোন সামাজিক রাজনৈতিক অসংগতি থাকলে ও সামাজিক ভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে প্রতিবাদের সংস্কৃতি ও গড়ে উঠে নাই।
স্কুল ভিত্তিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা গনিত অলিম্পিয়াড বয়স ভিত্তিক খেলাধুলায় পিছিয়ে আছে এ উপজেলা শিশু ও কমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এ উপজেলা রয়েছে একটি পৌরসভা।পৌরসভার নাগরিক সুবিধা নিয়ে ও রয়েছে নানা প্রশ্ন।পৌরসভার আধুনিকায়ন সেবার মান উন্নয়, অবকাঠামো উন্নয়ন বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির কোন ছিটেফোঁটা ও চোখে পড়ে নেই গত ২০ বছরে।
যোগাযোগমাধ্যম সহজ না হলে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা পাওয়া যায় না। বরিশাল পাতারহাট ভোর ৬ থেকে ৮টা আবার ১ টা থেকে ৫ টা প্রতিদিনই লঞ্চে মানুষ যাতায়াত করেন।কিন্তু আধুনিক ও উন্নতমানের নৌযান না থাকায় বরিশাল পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ও বশি। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা শেষ করে বা রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে সময় মত আসতে পারেন না।যার কারনে তাদের বরিশালে রাত্রি যাপন করতে হয়। যদি ও সী-ট্রাক ও পারিজাত নৌযান দুটি আধুনিক ও উন্নত মানের তাও বরিশাল পাতারহাট সরাসরি না।
তার উপর আবার শুকনো ও বর্ষা মৌসুমের উপর ভিত্তি করে লঞ্চ দুটি চলাচল করে। প্রতি ঘন্টায় আধুনিক ও উন্নতমানের নৌযানের ব্যবস্থা করতে পারলে যাতায়াত আর সহজ হত।এক ঘন্টা সোয়া একঘন্টার ভিতরে মানুষ বরিশাল পৌঁছাতে পারত। বিগত সংসদ দাদ পুর চর দিয়ে ফেরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এটা মেহেন্দিগঞ্জ বাসির অনেক দিনের স্বপ্নের দাবি ছিল,যা ইতি মধ্যে পূরণ হয়েছে। ফেরি চলাচল ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে যাতে এর সুফল মানুষ সহজ ভাবে ও কম ব্যয়ে পেতে পারে। তাছাড়া বরিশাল সাথে সড়ক ও সংযোগ সেতু স্থাপনের দাবি মেহেন্দিগঞ্জ বাসির দীর্ঘ দিনের।
আইন সেবা পাওয়া মানুষের নাগরিক অধিকার। বরিশালে কোন ব্যক্তির যদি কোর্টে হাজিরা থাকে তাকে ভোর ৬ টার লঞ্চ অথবা আগের দিন বরিশাল গিয়ে থাকতে হয়। বা বৈরি আবহাওয়ার কারনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলে সে সময় মত হাজিরা দিতে পারেন না। ফলে সে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।একাধিক বার এমন হাজিরার তারিখ পড়লে তাকে প্রতিবারই বরিশাল যাতায়াত করতে হয়।
স্থানীয় আর এমন অনেক নাগরিক সেবা আছে যা পেতে মেহেন্দিগঞ্জর বাসির অনেক দূভোর্গ পোহাতে হয়। সরকারের উচিত নাগরিকদের সকল সেবা তাদের উপজেলায় পৌঁছে দেওয়া । বিশেষ করে যেই উপজেলা গুলো দূর্গম ও প্রান্তিক।মেহেন্দিগঞ্জের যারা আইন পেশায় নিযুক্ত আছেন বরিশাল থেকে নিম্ন কোর্ট মেহন্দিগঞ্জে স্থান্তর করে আইনি বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে এ উপজেলার বাসিন্দাদের জীবন মান আর সহজ করে দিবে।
দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য তথা বরিশাল বিভাগের জন্য সরকার এত মেগা প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন করছে যা প্রত্যক্ষ কোন সুবিধা মেহেন্দিগঞ্জ বাসী ভোগ করতে পারছে না।
সরকারে উচিত এ অঞ্চলের জন্য আলাদা করে ভাবার।না হয় বাংলাদেশ মূল ভূখন্ড থেকে এ এলাকার জীবনযাত্রার মান পিছিয়ে যাবে।
মোস্তাফিজুর মিশুক।
তরুন লেখক ও সমাজকর্মী
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়,ভোলা।
