More

    ডোপ টেস্ট কী, কীভাবে করে, খরচ কত

    অবশ্যই পরুন

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করতে হচ্ছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ করেন কি না সেই পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে চালকদের এই পরীক্ষা করাতে হয়। এমনকি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও ডোপ টেস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

    কী এই ডোপ টেস্ট, কীভাবে করা হয়
    কোনো ব্যক্তি মাদকাসক্ত কি না তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে। যারা নিয়মিত মাদক সেবন করেন, তাদের শরীরে নেশাজাতীয় পদার্থের কিছু অংশ থেকে যায়। ডোপ টেস্টের মাধ্যমে সেটা ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির রক্ত বা মূত্র, কখনো দুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মাদক গ্রহণ করা ব্যক্তির সর্বোচ্চ শেষ ১ সপ্তাহের মুখের লালার মাধ্যমে, শেষ ২ মাসের রক্তের মাধ্যমে, শেষ ১২ মাস বা ১ বছরের চুল পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায় মাদকের নমুনা।

    কেন করা হয় ডোপ টেস্ট
    ক্রমশ বাড়ছে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা। কিশোর-কিশোরী থেকে বৃদ্ধ, প্রায় সব বয়সী ব্যক্তিরা মাদকে আসক্ত হয়ে যন্ত্রণাদায়ক অকাল মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা হুমকির কারণ। এ কারণে ডোপ টেস্ট করা হয়। আরও যেসব কারণে ডোপ টেস্ট করা হয়।

    >> মাদকসেবী শনাক্তকরণ
    >> সড়ক দূর্ঘটনা এড়াতে
    >> খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ ওষুধের ব্যবহার শনাক্তে
    >> আইনি জটিলতার এড়াতে
    >> আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে
    >> দুর্ঘটনা বা সন্দেহজনক আচরণের পর মাদক গ্রহণের প্রমাণ পেতে
    >> মাদকাসক্তি চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে

    বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সকল চাকরিতে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে অনেক সময় ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। আবার চাকরিতে থাকাকালীন কোনো কর্মীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তার ডোপ টেস্ট করানো হতে পারে।

    ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময় এই পরীক্ষা করানো হয়। নতুন আইন অনুসারে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলেও ডোপ টেস্ট করাতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা, গবেষণা বা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যেতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের ডোপ টেস্ট রিপোর্ট জমা দিতে হতে পারে। অস্ত্রের লাইসেন্স করতেও ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়।

    ডোপ টেস্টে কোন কোন মাদক ধরা পড়ে
    বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) প্রণীত খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু মাদক পরীক্ষা করা হয়। যেমন, ডায়াজেপাম, লোরাজেপাম, অক্সাজেপাম, টেমাজেপাম, কোডিন, মরফিন, হেরোইন, কোকেন, গাজা, ভাং, চরস, অ্যালকহোল বা মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও এলএসডি।

    ডোপ টেস্ট কীভাবে করা হয়
    >> ইউরিন বা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে
    >> মুখের লালা বা থুথু পরীক্ষার মাধ্যমে
    >> রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে
    >> চুল পরীক্ষার মাধ্যমে
    >> সন্দেহজন চালকদের নিঃশ্বাস পরীক্ষার মাধ্যমেও ট্রাফিক সাজেন্ট মাদক শনাক্ত করে থাকেন। এ ছাড়াও রয়েছে অ্যালকোহল ডিটেক্টর।

    কোন কোন মাদক কতদিন শরীরে থাকে
    ১. গাঁজা: প্রথমবার সেবনে গাঁজা ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত শরীরে থাকে। নিয়মিত ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এটি ৩০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত শনাক্তযোগ্য থাকতে পারে।
    ২. ইয়াবা: একবার সেবনে ১ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়। নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত থেকে যেতে পারে।
    ৩. হেরোইন বা আফিমজাতীয় অন্য মাদক: সাধারণত ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ৭ দিন পর্যন্ত শনাক্তযোগ্য থাকতে পারে।
    ৪. কোকেন: প্রথমবার সেবনে ২ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত শরীরে থাকে। নিয়মিত সেবনে ১ থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত শরীরে থেকে যায়।
    ৫. এক্সট্যাসি: সাধারণত ১ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত শরীরে থাকে, নিয়মিত সেবনে ৭ দিন পর্যন্ত শনাক্তযোগ্য।
    ৬. ঘুমের ওষুধ: ১-২ দিন সেবনে এটি ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত শরীরে থেকে যেতে পারে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তযোগ্য থাকতে পারে।
    ৭. ঘ্রাণযোগ্য মাদক : এ ধরনের মাদক শরীরে সবচেয়ে কম সময় থাকে, সাধারণত ১২ ঘণ্টা থেকে ২ দিন। তবে নিয়মিত সেবনে ৩-৫ দিন পর্যন্তও থেকে যেতে পারে।
    ৮. এলএসডি: প্রথমবার ব্যবহারে এটি সাধারণত ১ দিনের মধ্যেই শরীর থেকে বের হয়ে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত শনাক্তযোগ্য থাকতে পারে।
    ৯. অ্যালকোহল: সাধারণত ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত রক্তে বা মূত্রে শনাক্তযোগ্য থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে।
    ১০. মেথাডোন: প্রথমবার সেবনে সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত শরীরে শনাক্তযোগ্য থাকে। নিয়মিত সেবনের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত শরীরে থেকে যেতে পারে।

    ডোপ টেস্ট কোথায় করা হয়, খরচ কত
    দেশের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করানো যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক ডোপ টেস্টের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ ফি ৯০০ টাকা। নন-স্পেসিফিক পরীক্ষা যেমন, বেঞ্জোডায়াজেপিন, এমফেটামাইনস, অপিয়েটস ও কেননাবিনেয়েডস, এই চারটির প্রতিটির ফি ১৫০ টাকা এবং অ্যালকোহল পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা।

    স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদিত ডোপ টেস্টে মহানগরীর হাসপাতালগুলো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

    এছাড়া বাংলাদেশের বেশ কিছু স্থানে ডোপ টেস্ট কেন্দ্র রয়েছে, যেমন রংপুর, ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, খুলনা, বগুড়া, গাজীপুর, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, যশোর, নরসিংদী ও টাঙ্গাইলে। এই জেলাগুলোতে ডোপ টেস্টের জন্য মিনিল্যাব বসানো হয়েছে।

    ডোপ টেস্ট করার নিয়ম
    কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে ডোপ টেস্ট করা হয়। যে ব্যক্তির ডোপ টেস্ট করানো হবে প্রথমে তার পরিচয় নেওয়ার জন্য একটি ফরম পূরণ করতে হয়। সেখানে তার নাম, ঠিকানা, বয়স, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়।

    ডোপ টেস্টের ফরম পূরণ করার পর নমুনা জমা দিতে হবে। একজন বিসিএস ক্যাডার ডাক্তার ওই নমুনা পরীক্ষা করবেন। নমুনায় কোনো মাদকের অস্তিত্ব ধরা পড়লে ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে। যদি মাদকাসক্ত না হন তাহলে তার নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    পবিপ্রবিতে মিথ্যা অভিযোগে র‌্যাগিং ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

    পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৯...