জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ৩০ ঘণ্টায়ও ফলাফল ঘোষণা হয়নি। এমনকি ভোটই গণনা শেষ করতে পারেনি নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। এর পেছনে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র আছে বলে জানা গেছে।
যে কোনোভাবে তারা ভোটগণনা স্থগিত চাইছেন। তাদের এ তৎপরতা স্পষ্ট হওয়ার বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নির্বাচন বানচালের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
ভোটের আগে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ব্যালট গণনার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য সনাতন পদ্ধতিতে চলছে গণনা। এর মধ্যে নানা ষড়যন্ত্রের ডালপালা ছড়াচ্ছে এক মহল। কেউ কেউ বলছেন, উপাচার্য পদ বাগিয়ে নিতে দলবাজ শিক্ষকদের একটি অংশ ভোটগণনা ঠেকানোর মাধ্যমে ফল প্রকাশ আটকাতে চান। আবার ভোটগ্রহণে জড়িতরা বলছেন, ভোটের দিন রাত ১১টার মধ্যে ফল প্রকাশ করা গেলে কোনো শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রাণ দিতে হতো না।
জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণের শেষ সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত হলেও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারির কারণে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কেন্দ্রগুলোতে ভোটগণনা না করে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে সব ব্যালট বাক্স জড়ো করে গণনার কারণে বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। ভোট গণনার পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় পর রাত সোয়া ১০টায় গণনা শুরু হয়। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসারদের নিজ কেন্দ্রের ভোট গণনার দায়িত্ব না দিয়ে সম্মিলিতভাবে ভোট গণনার কারণে কিছু লোক গণনার কাজে ব্যস্ত থাকলেও বড় একটি অংশকে বসে থাকতে হয়েছে। এতে করে অহেতুক সময় নষ্ট হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন।
এর দুদিন আগে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনে কাস্ট হওয়া ৩০ হাজারের বেশি ভোটগণনা করে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হলেও জাকসুর আট হাজার ভোট গণনা ৩০ ঘণ্টায়ও শেষ হয়নি। ২১টি হল সংসদের ভোটগুলো গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এখন জাকসুর ভোটগণনা শুরু হয়েছে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শিক্ষক সনাতন পদ্ধতিতে ভোটগণনায় তিনদিন লেগে যাবে বলে তার হলের ভোটগণনা করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি ডিজিটাল পদ্ধতিতে (ওএমআর) গণনার দাবি তোলেন।
বৃহস্পতিবার জাকসু নির্বাচনের শুরু থেকেই চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। ভোটগ্রহণে চরম অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বয়কট করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বাম ধারার শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন প্যানেলগুলো। যদিও ইসলামী ছাত্রশিবির, বাগছাস ও স্বতন্ত্র সমর্থিত প্যানেল প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করলেও বয়কট করেনি।
অব্যবস্থাপনার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকরা ছাত্রদলের নির্বাচন বর্জনের পর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর মাধ্যমে পুরো আয়োজন বানচালের চেষ্টা করেছেন। শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়া তিন শিক্ষক হলেনÑগণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। তারা সবাই বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও বর্তমান উপাচার্যের বিরোধী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার পরও শিক্ষকরা রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নজিরবিহীন কর্মটি তারা সম্পন্ন করেছেন মূলত বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে বেকায়দায় ফেলতে।
অভিযোগ আছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য কামরুল আহসানকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কূটকৌশলের আশ্রয় নেন বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোÑউপাচার্য, প্রাধ্যক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বেশির ভাগ পদেই বিএনপিপন্থি শিক্ষকরাই রয়েছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনেও জাতীয়তাবাদী শিক্ষকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরও নির্বাচন শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ছাত্রদলের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারার অভিযোগ তুলে তিন বিএনপিপন্থি শিক্ষক নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পরিকল্পনার অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্ট নজরুল ইসলাম। তার প্রভাবে ওই কেন্দ্রে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। নির্বাচন ঘিরে এ জটিলতার গভীরে রয়েছে উপাচার্য নিয়োগসংক্রান্ত পুরোনো দ্বন্দ্ব। যেসব শিক্ষক তখন ভিসি পদে নিয়োগ পাননি, তারাই পরবর্তী সময়ে সক্রিয়ভাবে নানা ষড়যন্ত্রে জড়ান। ভিসি হওয়ার পর অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রশাসনিক দায়িত্বে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দিলেও যারা ভিসি হতে পারেননি, তারা ক্ষুব্ধ হন এবং জাকসু নির্বাচনকে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা নেন।
নির্বাচনের অনিয়ম সামনে এনে আন্দোলনের মাধ্যমে উপাচার্যকে বিতর্কিত করা এবং পদত্যাগে বাধ্য করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এছাড়া উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক নিয়োগে হাত দেননি অধ্যাপক কামরুল আহসান। এজন্য বিএনপি শিক্ষকদের ওই গ্রুপটি বারবার উপাচার্যের ওপর চাপ তৈরি করেন। কিন্তু তিনি নতিস্বীকার না করায় তারা নতুন ভিসি নিয়োগের নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক এসব অপতৎপরতায় যুক্ত আছেন। তারা নির্বাচনে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব তো পালন করেননি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও ঘাটতি ছিল। নির্বাচন কমিশনে থাকা এ চক্রের সহযোগীরাই এসব অপকর্ম করেছেন বলে নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন করে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, তাই এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের এ চক্রটি এর আগে জুলাই মাসে গণহত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত শিক্ষকদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না প্রমাণ করতে ও জাবি প্রশাসনকে বিপদে ফেলতে ছাত্রদলের মধ্যে গ্রুপিং করে ভোট বর্জন করানোসহ বিএনপিপন্থি কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে ভোট বর্জনের অভিযোগ রয়েছে বিএনপিপন্থি এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে গতকাল শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তারের সঙ্গে কথা হয় । প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগে চাপ প্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলেÑতিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, এরকম কোনো কিছু ঘটেনি।’
নির্বাচনি ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ভোট গণনা কার্যক্রম চলমান। আমরা খুব দ্রুতই ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করতে পারব বলে আশাবাদী৷’
জানতে চাইলেÑউপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘যত সমস্যা বা সংকটই থাক না কেন, আমরা যেহেতু জাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছি, আমরা এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করব।’
ফলাফল স্থগিতের শঙ্কায় উত্তেজনা
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় শেষ হয় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনের আগের দিন দুপুর পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভোট গণনা হওয়ার কথা থাকলেও রাতেই পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত। একাধিক প্যানেলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সনাতন পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। প্রভাব পড়ে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায়। গতকাল সকালে এক পোলিং অফিসারের মৃত্যুর ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত হতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠে। এ খবরে নির্বাচন কমিশনে ছুটে আসেন ভোটার ও প্রার্থীরা। জরুরি বৈঠকের ডাক দেন উপাচার্য। শুক্রবার রাতের মধ্যেই ফল প্রকাশ না হওয়ার শঙ্কায় কমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট ও স্বতন্ত্র পরিষদ। নির্বাচন কমিশনে বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। প্রার্থী ও ভোটারদের চাপের মুখে নতুন করে পাঁচটি ভোট গণনার টেবিল বাড়ানো হয়।
স্বয়ংক্রিয় গণনা চায় শিবির ও স্বতন্ত্র জোট, হাতেগোনা চায় বাগছাস
ভোটগ্রহণের দুদিনেও গণনা শেষ করতে না পারার পেছনে কারণ গণনা পদ্ধতি। জানা গেছে, নির্বাচনের শুরু থেকেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী পোলিং এজেন্ট ও রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ভোটগ্রহণে জড়িতদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটের আগের দিন রাতে তিনটি পরিষদের প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সনাতন পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের আবেদন জানানো হয়। তবে অন্য প্যানেলগুলোর দাবি ছিল, স্বচ্ছ ও কম সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশের স্বার্থে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের। যদিও শেষ পর্যন্ত হাতেগোনা পদ্ধতিতে গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেসব প্যানেল হাতেগোনা পদ্ধতির দাবি জানিয়েছিলেন, ইতোমধ্যে তারা কারচুপি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট স্বয়ক্রিয় পদ্ধতিতে করার দাবি জানায় ছাত্রশিবির ও স্বতন্ত্র পরিষদের প্রার্থীরা। যদিও আপত্তি জানায় বাগছাস সমর্থিত পরিষদ।
স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী (সহসভাপতি) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমরা দেখছি একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে বানচাল করতেই হাতেগোনা পদ্ধতিতে ভোটগণনার আবেদন করে। ইতোমধ্যে তারা হারার ভয়ে সরে দাঁড়িয়েছে। আমরা আর সে পদ্ধতি চাই না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভোটগণনা করতে হবে। নতুবা আরো লোকবল বাড়িয়ে আজকের মধ্যেই ফল ঘোষণা করতে হবে। এছাড়া এখান থেকে যাব না।’একই কথা বলেন সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী মাজহারুল ইসলামও।
তবে বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের জিএস প্রার্থী আবু তৌহিদ সিয়াম তার সোশ্যালমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘মাঝপথে এসে কোনো মেশিন নয়, বরং একই পদ্ধতিতে লোকবল বাড়িয়ে গণনা চালাতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে জাকসু ও হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। একই নির্বাচনে দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে ভোটগণনা করে নির্বাচনকে আরো ত্রুটিযুক্ত কইরেন না। প্রশাসন এবং ভোট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে জড়িত সকলের সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাকসু নির্বাচনের শুরু থেকেই নানা ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়। কোনো কোনো সংগঠন নির্বাচনের বিপক্ষে ছিল বলেও জানা গেছে। তবে অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন নিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকায় ত্রুটিসহ নানা অসংগতির অভিযোগ তোলা হয় জাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্যানেলের পক্ষ থেকে। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাগছাস, স্বতন্ত্র, সম্প্রীতির ঐক্যÑসব প্যানেলই নিজেদের জায়গা থেকে নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা এবং পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ করে বলে জানা গেছে। তবে অভিযোগ দেওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নিÑদাবি তাদের। এদিকে নির্বাচনি প্রচারের ক্ষেত্রেও বেশকিছু অভিযোগ ওঠে। একটি রাজনৈতিক দল সমর্থিত শিক্ষক কর্মকর্তারা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারকাজ চালানোর অভিযোগ করা হয় নির্বাচন কমিশনে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনের দিন নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে ছাত্রদলসহ যে পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করছে, তারা কারণ হিসেবে অব্যবস্থপনা ও অনিয়মের কথা তুলে ধরে। সম্প্রীতির ঐক্য, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ, সংশপ্তক পর্ষদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) প্যানেল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ভোট বর্জনের ক্ষেত্রে যে কারণ হিসেবে ভোটের আগের রাতে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ চূড়ান্ত হলেও প্রথম দুঘণ্টায় কোনো পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া, ভোট নিশ্চিতকারী আঙুলে কালি না থাকা, ভোটারের চেয়ে বেশি ব্যালট পেপার ছাপানো, নজরুল হলে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সব প্রার্থীর নাম না থাকা, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা, বহিরাগতদের আনাগোনা ইত্যাদি অনেক অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। তারা এসব অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির জন্য নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করেন।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও নির্বাচনে প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, জাকসুতে অসংগতির দায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের। তাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা, গাফিলতি, ব্যর্থতার কারণে এ ইলেকশনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
জাকসুর ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে শাহবাগে শিবিরের বিক্ষোভ
জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল শুক্রবার রাতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।