More

    জরাজীর্ণ এই দোকানে ৪ পুরুষের ‘বরিশাল দধি ঘর’

    অবশ্যই পরুন

    বর্তমান সময়ে খাবারের দোকান মানেই সাজসজ্জা আর চটকদার বিজ্ঞাপন। তারপরেও দৃষ্টিনন্দন ডেকোরেশনের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিচিতি নেই। অথচ ব্যতিক্রম চিত্র বরিশাল দধি ঘরে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে জরাজীর্ণ ছোট এই টিনের দোকান ঘরটির খ্যাতি ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। দিন যত যাচ্ছে, চার পুরুষের ‘বরিশাল দধি ঘরের’ সুনাম যেন ততটাই বিস্তৃত হচ্ছে।

    বরিশাল নগরীর মূল ব্যবসাকেন্দ্র গির্জা মহল্লা। সময়ের বিবর্তনে এলাকার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘কে বি হেমায়েত উদ্দিন সড়ক’। নামিদামি খাবারের হোটেল আর শপিংমলের ঝলমলে আলোয় বদলে গিয়ে এলাকার চিত্র। তবে পুরোনো কাঠামোতেই দাঁড়িয়ে থাকা ‘বরিশাল দধি ঘর’ খাঁটি দুধের দই, ঘোল, মাখন আর মুড়ির স্বাদ ৯৫ বছর ধরে তৃপ্তি মিটাচ্ছে মানুষের।

    শুধু তাই নয়, ব্যবসা শুরুর সময় দোকান ঘরটিতে লাগানো পুরানো দিনের সেই ঘড়িটি এখন সঠিক সময় দিচ্ছে। পাশেই আছে সেই আমলের কাঠের বাক্সের রেডিও। আর দধি ঘরের বড় বিশেষত্বহীন কাসার বাটিতে খাবার পরিবেশ, আর অপরিবর্তিত স্বাদ। এ কারণে শুধু বরিশাল নয়, দই-চিড়া, মুড়ি, ঘোল আর মাখনের স্বাদ নিতে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দূরদূরান্ত থেকে আসা ভোজন রসিকদের ভিড় লেগে থাকছে দোকানটিতে। বেচাকেনার চাপে যেন দম ফেলানোর সময় পাচ্ছেন না দোকান মালিক এবং কর্মচারীরা।

    শিক্ষার্থী তামান্ন আক্তার এবং ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান রিপন বলেন, বন্ধু এবং বান্ধবীদের নিয়ে এসেছেন দই-মুড়ি খেতে। সময় পেলেই বন্ধুরা মিলে ছুটে আসেন বরিশাল দধি ঘরে। আর শহরে এলে তো কথাই নেই। কারণ এখানকার মতো দই-চিড়া-মুড়ির স্বাদ অন্য কোথাও পাননি তারা। খেলেই পাওয়া যায় খাটি দুধের স্বাদ। আর ৩০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় দই, চিড়া, মিষ্টি মুড়ি, ঘোল ও মাখনের বাটি। তাছাড়া ৩৫ বছর আগে বরিশাল দধি ঘরে খাবারের স্বাদ যেমনটা ছিল আজও সেই একই স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার বাসিন্দা ইকবাল বিন হাবিব।

    দধি ঘরের পেছনেই দিকটাতে রয়েছে হেঁশেল। সেখানে চুলার ওপর বড় বড় ডেগে জ্বালানো হচ্ছে দুধ। ডেগের মুখ বস্তা দিয়ে ঢাকা, নিচে নিভুনিভু আগুন। দধি তৈরির কাজ করছেন ৬৭ বছর বয়সী কারিগর জাহাঙ্গীর হোসেন। যিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এই দোকানেই তৈরি করছেন মজাদার খাবার।

    জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ছয় থেকে সাত মণ দুধ লাগে। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে শুরু হয় দুধ জ্বাল দেওয়ার কাজ। বিকেল ৫টা পর্যন্ত জ্বাল দিয়ে দুধ ঘন করে বাদামি রঙের করা হয়। এরপর তা ছেঁকে দই বীজ দিয়ে ডেগে তোলা হয় এবং নিভন্ত চুলার ওপর পাটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। সকালেই তৈরি হয় জমাটবাঁধা খাঁটি দই। খাঁটি দুধ থেকে তৈরি বিধায় আমাদের দই এমন অনন্য।’

    চার পুরুষের বরিশাল দধি ঘরটি ১৯৩০ সালে সূচনা করেছিলেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা গ্রামের মিনহাজ উদ্দীন রাজ। শহরের একটি ঘোল-মুড়ির দোকানের কারিগর ছিলেন তিনি। পরে নিজেই ছোট ওই ঘরটিতে শুরু করেন দই বিক্রি। ১৯৯৬ সানে তার মৃত্যুর পর দায়িত্ব নেন বড় ছেলে আদু রাজ। তিনি মারা যান ১৯৯৭ সালে। এরপর হাল ধরেন তার ছোট ভাই আজিজ রাজ। ১৯৯৯ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে রিয়াজুল কবিরের হাতে যায় দধি ঘরের দায়িত্ব। বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্মের মাহমুদুল হাসান আগলে রেখেছেন প্রতিষ্ঠানটি।

    লাভ আগের মতো না হলেও, চার পুরুষের সুনাম ধরে রাখতে মানের সঙ্গে আপস না করে মানুষের ভালোবাসা আর বিশ্বাস অর্জনের কথা জানিয়েছেন বরিশাল দধি ঘরের পরিচালক মাহমুদুল হাসান।

    বরিশাল দধি ঘর কেবল একটি খাবারের দোকান নয়, বরং বরিশালের আত্মার অংশ। সেই বিশ্বাসটুকু নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট এই প্রতিষ্ঠানটি।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশালে মাছের দামে আগুন

    বরিশালে কয়েকদিন ধরে সবজি ও মুরগির মাংসের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে রয়েছে। তবে আগের তুলনায় বেড়েছে মাছের দাম। সোমবার...